বাঁ দিকে থেকে ঝর্ণা, সুলেখা ও জয়ন্তির লড়াই। — নিজস্ব চিত্র।
এতদিন লড়াই চলছিল লুডোর বোর্ডে। এ বার ভোটের ময়দানে।
ভদ্রেশ্বরের বিঘাটি পঞ্চায়েতে মোট ১৩টি আসন। প্রতি আসনেই ভোট হচ্ছে। কিন্তু নজর কেড়েছে ৪ নম্বর সংসদটি। আলোচনার কেন্দ্রে খুড়শাশুড়ি ঝর্না মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর দুই তুতো বৌমা— জয়ন্তী মণ্ডল এবং সুলেখা মণ্ডলের ত্রিমুখী লড়াই। যাঁরা প্রায়ই বিকেল হলে লুডো নিয়ে বসে পড়তেন, তাঁরা এ বার ভোটে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। ঝর্না সিপিএম প্রার্থী, জয়ন্তী তৃণমূলের এবং সুলেখা নির্দলের। তিন জনের বাড়ি পাশাপাশি। বিজেপি এবং কংগ্রেস এই সংসদের প্রার্থী দেয়নি।
প্রচারে তিন প্রার্থী নিজেদের কথা বললেন। উন্নয়নের আশ্বাস দিলেন। ঝর্না ও সুলেখার মুখে শাসকদলের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ এবং দুর্নীতির অভিযোগও শোনা গেল। কিন্তু তিন জনেই নিজেদের ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি প্রচারে বাকি দু’জনকেও ভোট দেওয়ার আবেদন জানালেন!
ভোট ময়দানে ঝর্না এবং সুলেখা নবাগতা। জয়ন্তী ওই পঞ্চায়েতে দু’বারের বিজয়ী প্রার্থী। সুলেখাকে এলাকাবাসী দাঁড় করিয়েছেন। জয়ন্তী বলেন, ‘‘দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) উন্নয়নকেই হাতিয়ার করেই সাধারণ মানুষের কাছে ভোটের প্রচার করেছি। কিন্তু প্রচারে জা বা খুড়শাশুড়ির বিরুদ্ধে কথা বলতে হবেই, এমন বাধ্যবাধকতা নেই।’’
একই সুর বাকি দুই প্রার্থীর গলাতেও। ঝর্নার কথায়, ‘‘ভোটে লড়ছি বলে কি বৌমাদের সঙ্গে বিবাদ করব? এলাকার প্রতিটি সরকারি প্রকল্পের কাজে শাসকদল দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। প্রচারে সে কথাটা বলেছি। তবে, জয়ন্তী দুর্নীতিতে নেই।’’ সুলেখা বলেন, ‘‘এটা কৃষিপ্রধান এলাকা। দুর্নীতি রুখতে ভোটে দাঁড়ানো। খুড়শাশুড়ি এবং জা-কেও ভোট দিতে অনুরোধ করেছি।’’
এ সব শুনে ভোটারদের একাংশ বলছেন, সব রাজনৈতিক দল যদি এ ভাবে প্রচার করত, তা হলে প্রতি ভোটে এত রক্তপাত-প্রাণহানি হত না। শুনতে হত না কুকথা। ভোট সত্যিই উৎসব হয়ে উঠত। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ মানছেন, ‘‘রাজনীতিতে এ ধরনের লড়াই খুব ভাল দিক। গণতন্ত্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ এই পরিবেশেই হওয়া উচিত। যে, যে দলেরই হোন, নিজেদের মতো করে নির্বাচনে লড়ছেন।’’ তৃণমূলের হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইনও বলেন, ‘‘ওঁরা একই পরিবারের সদস্য হতে পারেন। তবে, যে যাঁর নিজের মতাদর্শে নির্বাচনে লড়ছেন। এই পরিবেশে নির্বাচনের লড়াই হওয়াটা বাঞ্ছনীয়।’’
লুডোয় সাপের মুখে পড়লে কার না খারাপ লাগে! বহুবার হার এবং জিত— দুইয়েরই অভিজ্ঞতা আছে তিন জনের। কিন্তু লুডোর লড়াই যেমন তাঁদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেনি, ভোটের লড়াইও প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে দাবি তাঁদের। তাঁরা প্রত্যয়ী, পারিবারিক সুসম্পর্ককে টোল খেতে দেবেন না।
এই সংসদে মোট ভোটার আছেন ৬৬৫ জন। এর মধ্যে মণ্ডল পরিবারেরই ভোটার প্রায় ১৭০ জন। পরিবারের তিন জন প্রার্থী হওয়ায়, অনেকেই চিন্তায় পড়েছেন। কাকে ভোট দেবেন?
ঝর্না এবং জয়ন্তী-সুলেখার আক্ষেপ একটাই। কবে যে আবার লুডো নিয়ে বসা যাবে!