চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। ছবি: তাপস ঘোষ
গত বছর কোভিড পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের নির্দেশ এবং রাজ্য সরকারের সাবধানবাণীতে দুর্গাপুজোয় তেমন ভিড় হয়নি। একই ছবি দেখা গিয়েছিল চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয়। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি কার্যত একই থাকলেও এবং নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলেও দুর্গাপুজোর উৎসবে উড়ে গিয়েছে করোনা-বিধি।
চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর উৎসবও কি সেই পথে হাঁটবে? এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। তাঁদের মতে, কলকাতায়, যেখানে পুলিশ-প্রশাসনের পরিকাঠামো অনেক বেশি জোরদার, সেখানে সাধারণ মানুষের ঢল আটকানো যায়নি। ফলে, চন্দননগরে ভিড় হলে পুলিশ-প্রশাসন তা কি ভাবে ঠেকাবে, সেই প্রশ্ন রয়েছে। ঘটনাচক্রে, গত বার চন্দননগরে যে সব বারোয়ারি পুজো কমিটি ঘটপুজো করে উৎসব শেষ করেছিলেন, তাঁরাও চিরাচরিত প্রতিমা পুজোয় ফিরছেন। ফলে বিভিন্ন বারোয়ারি এবং চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি পুরোদস্তুর করোনা বিধি মেনে পুজো পালনের কথা বললেও জনগণেশ কি করবে, সে প্রশ্ন থাকছেই।
দিন কুড়ি পরেই জগদ্ধাত্রী পুজো। বিভিন্ন বারোয়ারির করছে, করোনা সংক্রমণ রুখতে আয়োজনের দিক থেকে চেষ্টায় ত্রুটি থাকবে না। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, খোলামেলা মণ্ডপ তৈরি করতে হবে। ভিতরের পরিসর বড় রাখার চেষ্টা করা হবে। মণ্ডপের বাইরে থেকে যাতে ঠাকুর দেখা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। মণ্ডপে ঢোকার মুখে স্যানিটাইজ়ার টানেল বসবে। প্রতিদিন মণ্ডপ স্যানিটাইজ় করতে হবে। মণ্ডপে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার রাখতে হবে। পুজোর আচারের সময় শারীরিক দূরত্বের দিকে নজর রাখতে হবে।
কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, ‘‘গত বছর কোভিডের নির্দেশিকা যথাযথ ভাবে মেনে পুজো হয়েছিল। এ বারেও হাইকোর্ট এবং রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা মেনেই পুজো হবে।’’ ভিড় হলে কী ভাবে সামাল দেওয়া হবে, চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে বিশদে তা জানা না গেলেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থার আশ্বাস মিলেছে। ডেপুটি কমিশনার বিদিতরাজ বুন্দেশ বলেন, ‘‘ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা করা হবে।’’
কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে চন্দননগর এবং ভদ্রেশ্বর মিলিয়ে ১৭১টি পুজো রয়েছে। তার মধ্যে চন্দননগরে পুজোর সংখ্যা ১২৯টি। ভদ্রেশ্বরে ৪২টি। পুজোর দিকে লক্ষ্য রেখে অগস্ট মাসের গোড়া থেকে বারোয়ারির সদস্যদের টিকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। অধিকাংশ সদস্যেরই প্রথম ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে। পুজোর মধ্যেই অনেকের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া হয়ে যাবে। যাঁদের টিকা নেওয়া হয়েছে, পুজো আয়োজন বা পরিচালনায় তাঁদেরই রাখার কথা কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে বলা হয়েছে।
গঙ্গাপাড়ের এই শহরে জগদ্ধাত্রী পুজোর অন্যতম সেরা আকর্ষণ বিসর্জনের শোভাযাত্রা। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর শোভাযাত্রা হয়নি। এ বারেও হবে কি না, স্পষ্ট নয়। কেন্দ্রীয় কমিটির শোভাযাত্রা ও বিসর্জন উপসমিতির চেয়ারম্যান মানব দাস জানান, সাধারণ সভায় ঠিক হয়েছে, প্রশাসন অনুমতি দিলে কেন্দ্রীয় কমিটি শোভাযাত্রা আয়োজনে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। হাইকোর্ট, রাজ্য সরকার বা প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী যাবতীয় আয়োজন হবে।’’