রথের সড়ক সর্বজনীনের মণ্ডপ। ছবি: তাপস ঘোষ।
প্রতিমার সাবেক রূপ। আলোকসজ্জার মুন্সিয়ানা। মণ্ডপের বৈচিত্র। বিসর্জনের জমকালো শোভাযাত্রা। সঙ্গে পরিবেশ ভাবনা। সব মিলিয়ে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো স্বতন্ত্র। এই পুজো তথা পরিবেশ সংরক্ষণের পরম্পরা নিয়ে গবেষণা করছে এ রাজ্যের যাদবপুর এবং বিলেতের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণালব্ধ তথ্য ভারতের অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি বিদেশেও কার্যকর করা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত সরকারের অধ্যয়ন ও গবেষণা সংক্রান্ত প্রকল্পের সহায়তায় এই কাজ চলছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক নীলাঞ্জনা গুপ্তের সঙ্গে এই কাজে রয়েছেন তাঁর সহকর্মী রাহি সরেন। ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়টির তরফে আছেন সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইয়েন ম্যাগডেরা। পুজোকে কেন্দ্র করে ধর্মীয়, সামাজিক, পরিবেশগত সামগ্রিক প্রেক্ষাপট তাঁরা বিশ্লেষণ করবেন। বিপুল জনসমাগম ও কর্মসংস্থানের বিষয়ও প্রাধান্য পাবে।
আগামী সোম ও মঙ্গলবার জগদ্ধাত্রীর বিসর্জন। বিসর্জনের পরে প্রতিমা দ্রুত গঙ্গা থেকে তোলা হয় এখানে। ফুলমালা জলে ফেলতে দেওয়া হয় না। কাঠামো বা অন্য কিছু যাতে ভেসে না যায়, সে জন্য জলের নির্দিষ্ট জায়গা জাল দিয়ে ঘেরা হয়। চন্দননগর পুরসভাকে চিঠি দিয়ে নীলাঞ্জনা জানিয়েছেন, বিসর্জন প্রক্রিয়া তাঁরা পর্যবেক্ষণ করতে ও ছবি তুলতে চান। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে এই ব্যবস্থা কার্যকর করা এবং বৃহত্তর ক্ষেত্রে তার প্রভাব নিয়ে আলোচনাও করতে চান। কাজের পরিধি নিয়ে তিনি প্রতিমার সাজসজ্জায় শোলার অনবদ্য কারুকাজের উদাহরণ দেন। তাঁরা জেনেছেন, আশপাশে শোলার উৎপাদন কমেছে। বাংলাদেশ থেকে শোলা আনাতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শিল্পীদের ব্যবসায় মন্দা। তাঁদের পেশার উন্নতির ব্যাপারে ভাবনাচিন্তার অবকাশ রয়েছে। এ ভাবেই নানা বিষয় গবেষণার আওতায় আসবে।
নীলাঞ্জনা জানান, বুধবার তাঁরা চন্দননগরে এসেছিলেন। স্থানীয় বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও তাঁদের কথা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। মেয়র জানান, বিসর্জনে গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে এবং পরিবেশ রক্ষায় পর্যাপ্ত সংখ্যাক পুরকর্মী নিয়োগ-সহ যা যা ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা বিস্তারিত ভাবে গবেষক দলকে জানাতে তিনি দফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। মেয়রের সংযোজন, ‘‘ওঁদের সঙ্গে বৈঠকও করব আমরা।’’
চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউয়ের দাবি, এখানকার বারোয়ারিগুলি অনেক দিন ধরেই পরিবেশবান্ধব পুজোর দিকে হাঁটছে। সার্বিক ভাবে সচেতনতা বেড়েছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার মাঝখানে বেড়েছিল। এখন অনেক নিয়ন্ত্রিত। বারোয়ারিগুলির মধ্যে গাছ লাগানোর প্রবণতা যেমন বেড়েছে, তেমনই রক্তদান শিবির-সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে গাছের চারাও বিলি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে পরিবেশের উপরে পুরস্কার দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘‘এমন গবেষণা অত্যন্ত সুখবর। চন্দননগরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ধারাবাহিকতা আমরা রক্ষা করব।’’
বিশ্বজিতের বক্তব্য, বিদেশেও মূর্তিপুজো বাড়ছে। সেখানেও নদীতে প্রতিমা বিসর্জন হচ্ছে, বাড়ছে দূষণও। ফলে, জলদূষণ রোধে চন্দননগরের বিসর্জন পদ্ধতি ভারতের অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি বিদেশেও কার্যকর করা যেতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো হেরিটেজ এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’’ নীলাঞ্জনা বলেন, ‘‘হেরিটেজ স্টাডি নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে চন্দননগর হাতে-কলমে শিক্ষার জায়গা হতে পারে।’’