হাওড়ার গ্রামগঞ্জে ১০০ দিনের কাজের এমন ছবি আর সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। নিজস্ব চিত্র
ছ’মাস ধরে হাওড়া জেলায় একশো দিনের কাজ প্রকল্পে মজুরি অমিল জবকার্ডধারী শ্রমিকদের। ফলে, দু’রকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। শ্রমিকরা বেঁকে বসায় বেশিরভাগ পঞ্চায়েতে এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর পরে টাকা এলে চলতি অর্থবর্ষে কাজের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ, নভেম্বর থেকে মে পর্যন্তই একশো দিনের কাজের মরসুম। বর্ষা চলে এলে কাজের গতি কমে। তাই কাজের মরসুমেই যদি কাজ ধাক্কা খায় তা হলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
জেলা প্রশাসনের কর্তারা মানছেন, মজুরি না-মেলায় অনেক জবকার্ডধারী কাজ করতে চাইছেন না। সেই কারণেই দৈনিক শ্রমদিবসের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাচ্ছে না। তাঁদের হিসেবে, সব মিলিয়ে হাওড়ায় বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা। অর্থাভাবে বহু শ্রমিক সে ভাবে ইদ পালন করতে পারেননি। অনেককে ধারদেনা করতে হয়েছে।
কেন মজুরি অমিল এ প্রশ্নের যথাযথ উত্তর মেলেনি প্রশাসনের কাছে। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক কর্তা জানান, কেন্দ্র টাকা না-পাঠানোর জন্য রাজ্য জুড়েই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাজ্য জুড়ে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বলে তাঁর দাবি। কেন্দ্রের কাছে টাকা চেয়ে নিয়মিত দরবার করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, কাজ করার ১৫ দিনের মধ্যেই পঞ্চায়েতগুলির পক্ষ থেকে জবকার্ডধারীদের বিল (এফটিএ) তৈরি করে অনলাইনে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের পোর্টালে। সেখান থেকে এক সপ্তাহের মধ্যেই জবকার্ডধারীদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি মজুরির টাকা চলে আসে। কিন্তু এ বারে গত নভেম্বর মাস থেকে সেই টাকা আসছে না।
হাওড়ায় মোট পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৫৭। অধিকাংশ পঞ্চায়েতেই ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমতা-১ ব্লকের সব পঞ্চায়েত মিলিয়ে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় তিন কোটি টাকা বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এখানকার একটি পঞ্চায়েতের কর্তারা জানান, তাঁদের পঞ্চায়েতে বকেয়া আছে প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা। এই টাকা না আসায় তাঁদের কার্যত পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এই পঞ্চায়েতে দু’মাস ধরে একশো দিনের প্রকল্পে কোনও কাজ হচ্ছে না।
এক পঞ্চায়েত কর্তার বক্তব্য, ‘‘যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদেরই মজুরি দেওয়া যাচ্ছে না। সেই কারণে নতুন করে আর কোনও কাজ করানোর ঝুঁকি নিচ্ছি না।’’
বাগনান-১ ব্লকের একটি পঞ্চায়েতের বকেয়া প্রায় ১ কোটি টাকা। এই অবস্থায় এখানেও নতুন কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে এই পঞ্চায়েত সূত্রের খবর।
যে সব এলাকায় কাজ হচ্ছে, সেখানেও লক্ষ্যমাত্রার থেকে অনেক কম জবকার্ডধারীকে নিয়োগ করা হচ্ছে। যেমন বাগনান-২ ব্লকে কাজ হচ্ছে। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, এখানে দৈনিক গড়ে ৩৭০০ করে শ্রমদিবস সৃষ্টি করার কথা থাকলেও বাস্তবে ২২০০-র বেশি শ্রমদিবস সৃষ্টি হচ্ছে না।
ওই ব্লক প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘বকেয়া টাকার জন্য জবকার্ডধারীরা আমাদের উপরে চাপ দিচ্ছেন। কেন মজুরির টাকা বাকি তার কোনও উত্তর দিতে পারছি না। উল্টে গরিব মানুষদের কাছে লজ্জায় আমাদের মাথা কাটা যাচ্ছে। জবকার্ডধারীরা টাকা না পাওয়ায় নতুন করে আর কেউ কাজ করতে চাইছেন না। ফলে, দৈনিক শ্রমদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করা যাচ্ছে না।’’