হাওড়া পুরসভার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে, মহেশ পাল লেনের সেই বেআইনি বহুতল। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
পুরসভার অনুমোদন ছিল দোতলা বাড়ির। অথচ, সেই জায়গায় তৈরি করা হয়েছে ছ’তলা বহুতল! তা-ও মাত্র তিন ফুট চওড়া গলির মধ্যে। অভিযোগ, হাওড়া পুরসভার সাত নম্বর বরোর ঠিক পিছনে, ৪৯/১ মহেশ পাল লেনে এমন একটি বেআইনি নির্মাণ হলেও পুরসভা ছিল দর্শক। এই সংক্রান্ত মামলাটি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ওঠার পরে তিনি এ বার কার্যত খড়্গহস্ত হলেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের দুই পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে। বিচারপতির নির্দেশে ওই দুই ইঞ্জিনিয়ারের বিষয়-সম্পত্তি এবং আয়ের উৎস জানার জন্য শুক্রবার হাওড়া পুরসভায় এসে তদন্ত শুরু করল রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় লিলুয়া ও খড়দহে দু’টি পৃথক বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এ দিকে, পুরসভার দুই পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে ভিজিল্যান্সের তদন্ত শুরু হওয়ার খবর প্রথমে কয়েক জন শীর্ষ আধিকারিক ছাড়া আর কেউ জানতেন না। কিন্তু এ দিন দুপুরে রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশনের ছয় সদস্যের একটি দল এসে দুই ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে, সেই খবর ছড়িয়ে পড়ায় তোলপাড় শুরু হয়ে যায় পুর ভবনে। পুরসভার ডেপুটি কমিশনার (১) অরুণাভ দাসের ঘরে ওই দুই ইঞ্জিনিয়ারকে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ভিজিল্যান্স কমিশনের সদস্যেরা। পরে তাঁরা ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের মহেশ পাল লেনে ওই বেআইনি বহুতলটি পরিদর্শনে যান।
হাওড়া পুরসভা এলাকার বেতড় মোড়ে সাত নম্বর বরোর ঠিক পিছনে তিন ফুট গলির মধ্যে ছ’তলা ওই বহুতলটি তৈরি করা নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়ে এসেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, একাধিক বার পুরসভাকে ঘটনাটি জানানোও হয়েছিল। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেননি। পুরসভার আবার পাল্টা দাবি, ওই বহুতলের মালিককে নোটিস পাঠিয়ে বলা হয়েছিল, তিনি যেন নিজেই বাড়িটি ভেঙে দেন। কিন্তু মালিক সেটাও করেননি। শেষমেশ ইন্দ্রাণী পাঁজা নামে এক মহিলা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে ওই বেআইনি নির্মাণটি নিয়ে মামলা করেন। পরে সেই মামলা স্থানান্তরিত হয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৮ নভেম্বর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর রায়ে উল্লেখ করেন, ওই বহুতলের পাঁচটি তলাই সম্পূর্ণ অবৈধ। শুধু তা-ই নয়, হাওড়া পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং এক জন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের চোখের সামনে বহুতলটি তৈরি হয়েছে। বিচারপতি তাঁর রায়ে এ-ও জানান, ওই দুই ইঞ্জিনিয়ারকে সর্বশেষ শুনানিতে হাজির থাকার সুযোগ দেওয়া হলেও পরে তাঁরা এ বিষয়ে হলফনামা দেননি।
এর পরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশনকে বলেন, কী ভাবে ওই ছ’তলা বহুতলটি তৈরি হল এবং এর পিছনে সংশ্লিষ্ট দুই ইঞ্জিনিয়ারের হাত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তাঁদের সম্পত্তি ও আয়ের উৎস জানতে হবে। সেই তদন্ত-রিপোর্ট ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে বলেন তিনি। একই সঙ্গে বিচারপতি এই মামলাটিকে ‘হার্ড-ইন-পার্ট’ বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ, বিচার-কক্ষের পরিবর্তন হলেও অন্য বিচারপতির কাছে এই মামলাটি স্থানান্তরিত হবে না।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ যে তাঁরা পেয়েছেন, তা স্বীকার করেছেন হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে আমরা সব জেনেছি। এ দিনই ভিজিল্যান্স কমিশন থেকে ছ’জনের একটি দল এসেছিল। আমরা সব নথি তাঁদের দিয়েছি।’’