West Bengal Panchayat Election 2023

ফ্লেক্সে ছবি নিয়ে প্রকাশ্যে শাসকের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব

বিধায়কের অনুগামী বলে পরিচিত সুরজিৎ মণ্ডল দলীয় প্রার্থীদের প্রচারে যে ফ্লেক্স লাগাচ্ছেন, তাতে মমতা-অভিষেক-বিধায়কের ছবি রয়েছে। নেই সাংসদের মুখ।

Advertisement

প্রকাশ পাল ও দীপঙ্কর দে

চণ্ডীতলা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩ ০৮:৩৫
Share:

সুবীর মুখোপাধ্যায়ের প্রচারের ফ্লেক্সে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। কিন্তু বিধায়ক স্বাতী খন্দকারের ছবি নেই । সুরজিৎ মণ্ডল যে ফ্লেক্স লাগাচ্ছেন, তাতে বিধায়কের ছবি রয়েছে। নেই সাংসদের মুখ। নিজস্ব চিত্র

হুগলি জেলা পরিষদের ৯ নম্বর আসনে চণ্ডীতলা থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন বিদায়ী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রচারের ফ্লেক্সে নিজের সঙ্গে দলের দুই প্রধান মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকছে। কিন্তু এলাকার বিধায়ক স্বাতী খন্দকারের ছবি নেই।

Advertisement

আবার, বিধায়কের অনুগামী বলে পরিচিত সুরজিৎ মণ্ডল দলীয় প্রার্থীদের প্রচারে যে ফ্লেক্স লাগাচ্ছেন, তাতে মমতা-অভিষেক-বিধায়কের ছবি রয়েছে। নেই সাংসদের মুখ।

সুবীর-সুরজিৎ দ্বন্দ্ব পুরনো। ফ্লেক্সের ছবি নিয়ে ফের তা প্রকাশ্যে। তৃণমূলের খবর, ওই আসনে প্রার্থিপদ নিয়ে সুবীর-সুরজিতের মধ্যে কার্যত দড়ি-টানাটানি হয়। সুবীরের হয়ে ‘লড়াই’ করেন সাংসদ। সুরজিতের হয়ে বিধায়ক। দু’জনেই মনোনয়ন দাখিল করেন। সুবীর দলীয় প্রতীক পান। সুরজিৎ মনোনয়ন তুলে নেন।

Advertisement

সুরজিতের স্ত্রী অনিন্দিতা জেলা পরিষদের বিদায়ী সদস্য। তার আগে সুরজিৎ সদস্য ছিলেন। দলের গোষ্ঠী বিভাজন সুরজিতের কথায় স্পষ্ট। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওঁরাই প্রথমে বিধায়কের ছবি বাদ দিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। প্রয়াত জননেতা আকবর আলি খন্দকারের নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন সাংসদ। সাংসদকে নেতা মনে করি না। আমি কেন টিকিট পেলাম না, সাংসদ জানেন।’’ সুবীরের বক্তব্য, ‘‘কে কোথায় কার ছবি দিয়ে প্রচার করছেন, জানি না। আমি আমার মতো প্রচার করছি।’’

ছবি নিয়ে বিধায়ক তথা আকবরের সহধর্মির্ণী স্বাতীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমার ছবি দেওয়া হল কি না, এ নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। রাজনীতিতে হৃদয়কে বড় রাখতে হবে। এটা আমাকে শিখিয়ে গিয়েছেন আমার গুরু আকবর আলি খন্দকার।’’ সাংসদ বলেন, ‘‘মানুষ আমাদের দলের প্রার্থীকে ভোট দেবেন, এটাই আসল। আমি তিন বার পূর্ণ সময়ের সাংসদ, এক বারের বিধায়ক। ফ্লেক্সে ছবি থাকল কি না, এ সব নগণ্য ব্যাপারে মন্তব্য করব না।’’

সাংসদের বক্তব্য, সুরজিৎ দলের তালিকা না-মেনে জেলা পরিষদে মনোনয়ন জমা দেন। দল তাঁকে পঞ্চায়েত সমিতিতে জায়গা দিয়েছিল। জেলা পরিষদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পরে সুরজিৎ পঞ্চায়েত সমিতিতে মনোনয়ন জমা দেন। আইন অনুযায়ী, এক জায়গায় মনোনয়ন দাখিলের পরে অন্য স্তরে দাঁড়ানো যায় না। ফলে, পঞ্চায়েত সমিতিতেও প্রার্থী হতে পারেননি। সাংসদের কথায়, ‘‘দলের নিয়ম মানেন না, প্রার্থিপদ বাতিল হয়, এমন এক জনের কথায় কী মন্তব্য করব! এ সব ছোটখাটো ব্যাপারে মন্তব্য করি না।’’

গত পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের তারকেশ্বরের একটি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন সুরজিৎ। সেখানে দল শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে (শিক্ষক নিয়োগ মামলায় এখন হাজতে। দল বহিষ্কার করেছে) প্রার্থী করেছিল। সুরজিৎ মনোনয়ন তুলে নিয়েছিলেন। গ্রেফতার হওয়ার পরে জেলা পরিষদে শান্তনুর ঘর বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন সুরজিতের স্ত্রী অনিন্দিতা। সদস্য থাকাকালীন জেলা পরিষদে নানা অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সুরজিৎ।

সুবীর-সুরজিৎ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মোহন আদক। তিনি বলেন, ‘‘সর্বত্রই তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকট হচ্ছে। বিধায়ক-সাংসদদের ধরে দুর্নীতিবাজরা প্রার্থী হয়েছেন।’’ সিপিএমের চণ্ডীতলা-২ জোনাল সম্পাদক অপূর্বকুমার পাল বলেন, ‘‘তৃণমূলের নীতি, কত কামিয়ে উপরের নেতৃত্বদের দিতে পারবে, তার লড়াই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement