গোঘাটের নতুন বাজার থেকে উদ্ধার শব্দবাজি। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।
দোরগোড়ায় কালীপুজো। সামনে শীত। তার উপরে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা। এই আবহে চিকিৎসক, পরিবেশকর্মী থেকে শুরু করে বহু নাগরিক চাইছেন, বাজি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হোক।
পরিবেশকর্মীদের দাবি, দিল্লি, কলকাতা-সহ ভারতের বড় শহরগুলিতে বিশেষত শীতে বাতাস ভারী হলে দূষণ বাড়ে। চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, করোনা ভ্রুকুটি থাকছেই। এই পরিস্থিতিতে বাজি পুড়িয়ে বাতাসকে আরও ভারাক্রান্ত করা অনুচিত। তাঁদের যুক্তি, কালীপুজোয় ঘটা করে উদ্বোধন, ভাসানের শোভাযাত্রা বন্ধ। ভিড় করে ঠাকুর দেখাও নিষেধ। তা হলে, বাজি বন্ধ নয় কেন?
উত্তরপাড়ার বিশিষ্ট চিকিৎসক শুভদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা ছোটবেলায় যখন বাজি পোড়াতাম, তার সঙ্গে গত কয়েক বছরে পরিবেশের গুণগত অনেক পার্থক্য। এখন জনঘনত্ব অনেক বেশি। মাঠ প্রায় উধাও। পুরনো বাড়ি ভেঙে আবাসন গজিয়ে গিয়েছে। আবাসনের ছাদে বাজি পুড়লে বাতাসে তার প্রভাব মারাত্মক। করোনার জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা নিয়ে বহু মানুষ আসছেন। বাজির ধোঁয়া তাঁদের শরীরে খুব ক্ষতি করবে। তাই, কালীপুজোর সন্ধ্যায় আনন্দের অন্য উপকরণ বেছে নেওয়া হোক।’’
হুগলিতে বিভিন্ন সংগঠন বাজি বন্ধে একযোগে গলা তুলেছে। জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ওই নাগরিক মঞ্চ। বিভিন্ন সংগঠন নিজেদের মতো করেও প্রচার শুরু করছে। উত্তরপাড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিজন দাস বলেন, ‘‘বাজি পুরোপুরি বন্ধের প্রশ্নে আমি সহমত। কিছু প্রান্তিক মানুষ বাজি তৈরি করেন। সরকার তাঁদের বিকল্প আয়ের পথ বাতলাতে পারে।’’
পরিবেশ-পরিস্থিতির কথা বলে সমাজের নানা শ্রেণির মানুষ বাজি বন্ধে সওয়াল করলেও প্রকৃত পরিস্থিতি কী?
হুগলির বিভিন্ন জায়গায় যথারীতি প্রচুর বাজি তৈরি হয়েছে। আতশবাজি তো বটেই, শব্দবাজিও দেদার বিক্রি হচ্ছে বাজির আঁতুড়ঘরে। হুগলি গ্রামীণ পুলিশ অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু নিষিদ্ধ বাজি আটক করেছে। তবে, বিক্রি বন্ধ হয়নি। হুগলিতে বাজি ব্যবসার বড় এলাকা আরামবাগ। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বাজি সংক্রান্ত নির্দেশিকা কার্যকর করতে আরামবাগ মহকুমায় পুলিশ মাইক প্রচার, লিফলেট বিলি চলছে। এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডল বলেন, ‘‘গত দু’দিনে ১২০ কেজি নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত এবং ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
কালীপুজোয় আরামবাগ শহরে কয়েকশো দোকানে বাজি বিক্রি হয়। যদিও, লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৫টি দোকানের। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, দুর্গাপুজোর আগেই বাজি মজুত করেছেন। অনেকে লক্ষাধিক টাকা ব্যবসায় ঢেলেছেন। তাঁদের ক্ষোভ, পর্ষদের নির্দেশের জেরে দোকানে বাজি সাজিয়েও গুদামে সরাতে হয়েছে। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, বিধিনিষেধের কথা যথেষ্ট আগে জানানো হল না কেন? কেনই বা সবুজ বাজির তালিকা দেওয়া হল না?
পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, কালীপুজোর মুখে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে নিষিদ্ধ বাজি রুখতে ‘নিয়ম বাঁচানোর’ অভিযান চলে। বাজি তৈরির জায়গাগুলিতে যে হারে বিকিকিনি চলছে, তাতে উৎসবের দিন কী পরিস্থিতি হবে, তা ভেবেই তাঁরা শঙ্কিত।