ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত এলাকায় পাকা বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে বেনিয়ম দূর করতে উদ্যোগী হল হাওড়া জেলা প্রশাসন। পঞ্চায়েতের কাছ থেকে অনুমতি না-নিয়ে কত পাকা বাড়ি তৈরি হয়েছে তা জানতে বিডিও এবং যুগ্ম বিডিওদের তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে সমীক্ষা। ওই নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে।
জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘বিডিও এবং যুগ্ম বিডিও-রা পরিদর্শনে গিয়ে দেখছেন, গ্রামে কত পাকা বাড়ি আছে এবং কত বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। দেখা গিয়েছে, বেআইনি পাকা বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতগুলি কোনও ব্যবস্থা নিতে চায় না। এটা তাদের দায়িত্ব নয় বলে এড়িয়ে যায়। তাই যে সব বাড়ি বিনা অনুমতিতে হয়েছে, সেই সব নির্মাণের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
কেন এই পদক্ষেপ?
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি তৈরির ব্যাপারে বছর তিনেক আগেই অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত আইনের ২০৫ নম্বর ধারায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা হয়েছে। তাতে গ্রামে একতলা থেকে চার তলা পর্যন্ত পাকা বাড়ি তৈরি করতে হলে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের অনুমতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শুধু তা-ই নয় এর জন্য প্রয়োজনীয় ফি নেওয়ার কথাও আইনে রয়েছে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে কার্যত নৈরাজ্য চলছে। একের পর এক দোতলা-তিনতলা পাকা বাড়ি হচ্ছে। কিন্তু অনুমতি নেওয়ার তোয়াক্কাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কেউ করছেন না। কেবলমাত্র যাঁরা ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে বাড়ি করছেন, তাঁরাই অনুমতি নিচ্ছেন। এর ফলে, একদিকে যেমন যত্রতত্র বাড়ি হওয়ার ফলে নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না, অন্যদিকে, পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ আয়ের সুযোগ হারাচ্ছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার পঞ্চায়েতগুলিকে অনুদান কমিয়ে দিয়েছে। রাজ্য সরকারেরও পঞ্চায়েতগুলিকে অর্থ সাহায্য করার সুযোগ তেমন নেই। এই পরিস্থিতিতে গ্রামোন্নয়নের কাজ অব্যাহত রাখতে পঞ্চায়েতগুলির নিজস্ব আয় বাড়ানোর উপরে জোর দিতে শুরু করেছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর।
হাওড়া জেলায় বাড়ি তৈরির আইন প্রয়োগের বিশেষ গুরুত্ব আছে বলে জানান জেলা প্রশাসনের এক কর্তা। তিনি জানান, এই জেলায় দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে অসংখ্য পাকাবাড়ি। কিন্তু অনুমতি না নিয়ে করার ফলে অনেক ক্ষেত্রে দু’টি বাড়ির মধ্যেকার ছাড়ের নিয়ম মানা হচ্ছে না। নিকাশির ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পঞ্চায়েতগুলি আয়ও বাড়াতে পারছে না। বাড়ি তৈরির আইন কঠোর ভাবে চালু হলে এই দুই সমস্যা দূর করা যাবে বলে তাঁর দাবি।
তবে, শুধু হাওড়া জেলা নয়, রাজ্য জুড়েই এই তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর। এই দফতর থেকে একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ চালু করা হয়েছে। সেই অ্যাপের মাধ্যমে বাড়ি তৈরির অনুমতি নিতে হবে। পঞ্চায়েতগুলি অনলাইনেই অনুমতি দেবে। বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েতগুলিকে একটি কমিটি করার কথাও বলা হয়েছে বলে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরসূত্রের খবর।