Pond Filling Tikiapara

পুকুর ভরাটের প্রতিবাদ করায় মহিলাকে বেধড়ক ‘মার’, ছেলেদের ‘খুনের হুমকি’

পেশায় আয়ার কাজ করা ওই মহিলা জানান, ১২ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। তার পরে তিনি অনেক কষ্টে দুই ছেলেকে মানুষ করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪২
Share:

এই পুকুর ভরাট করে বাড়ি তৈরি নিয়েই সূত্রপাত গোলমালের। বুধবার, হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

এ বার এলাকায় পুকুর ভরাটের ঘটনার প্রতিবাদ করায় বাড়িতে চড়াও হয়ে এক মহিলাকে বেধড়ক মারধর এবং তাঁর কলেজপড়ুয়া দুই ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিয‌োগ উঠল। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের টিকিয়াপাড়া স্টেশনের কাছে, নটবর পাল রোডে। আতঙ্কিত পরিবারটি স্থানীয় ব্যাঁটরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। যার ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগেই হাওড়া পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাধব ঘোষ লেনে এক প্রোমোটার স্থানীয় বাদাম পুকুর বোজানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় তা আটকে যায়।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যাঁটরা থানা এলাকার চ্যাটার্জিপাড়া মোড়ের কাছে একটি মন্দিরের পিছনে প্রায় তিন কাঠার একটি পুকুর ধীরে ধীরে আবর্জনা ফেলে বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। সেখানে এখন ঘরবাড়ি তৈরির কাজ চলছে। অভিযোগ, এই গোটা ঘটনার পিছনে দায়ী ‘উত্তর ব্যাঁটরা জাগরণ ক্লাব’। তারা ওই পুকুর বুজিয়ে সেখানে ক্লাবের জন্য বাড়ি তৈরির পাশাপাশি অস্থায়ী ঘর তৈরি করে সেগুলি ভাড়া দিচ্ছে। এই ঘটনারই প্রতিবাদ করেছিলেন ওই এলাকার দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা সাগরিকা দলুই।

পেশায় আয়ার কাজ করা ওই মহিলা জানান, ১২ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। তার পরে তিনি অনেক কষ্টে দুই ছেলেকে মানুষ করছেন। চোখের সামনে পাড়ার একটি ক্লাব ধীরে ধীরে ওই পুকুরটি বুজিয়ে সেখানে বাড়িঘর তৈরি করে ভাড়াটে বসাচ্ছে দেখে প্রতিবাদ করেছিলেন তিন। অভিযোগ, সেই ‘অপরাধে’ কলেজপড়ুয়া দুই ছেলের সামনে তাঁর পেটে লাথি মারা হয়। ওই ক্লাবের সদস্যদের স্ত্রীরা এসে তাঁকে রাস্তায় ফেলে মারধর করেন। বুধবার সাগরিকা বলেন, ‘‘যে কোনও শিক্ষিত মানুষেরই পুকুর বোজানোর প্রতিবাদ করা উচিত। তাই আমিও করেছি। আবার এমন ঘটলে আবারও প্রতিবাদ করব। আমার ছেলেদের ওরা প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছে। আমি পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে হামলাকারীদের নামে অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’

Advertisement

এ দিন নটবর পাল রোডের ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পুকুরটির এক-চতুর্থাংশ আবর্জনা ফেলে বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে স্থানীয় ওই ক্লাবটি নিজেদের জন্য পাকা বাড়ি ও কিছু অস্থায়ী ঝুপড়ি তৈরি করেছে। যাদের বিরুদ্ধে ওই মহিলাকে মারধর ও পুকুর বোজানোর অভিযোগ উঠেছে, সেই উত্তর ব্যাঁটরা জাগরণ ক্লাবের বর্ষীয়ান সদস্য উদয় খামরুই বলেন, ‘‘প্রথমত, এটা কোনও কালেই পুকুর ছিল না। নিচু জমি ছিল। তাই বোজানোর প্রশ্নই ওঠে না। মন্দিরের ফুল, বেলপাতা জমতে জমতে বুজে গিয়েছে।’’ ক্লাবের আর এক সদস্য বিট্টু সোনকরের দাবি, ‘‘ওই মহিলা মিথ্যা কথা বলছেন। ওঁকে কেউ মারেনি। বরং উনিই পাড়ার মহিলাদের মারধর করেছেন।’’

আক্রান্ত মহিলা পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার যে অভিযোগ তুলেছেন, সেই প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়ার পরেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। ওই মহিলার সঙ্গে কথাও বলে এসেছে। পুকুরটি যাতে আর না বোজানো হয়, অভিযুক্ত ক্লাবকে তা বলা হয়েছে এবং বিষয়টি পুরসভাকেও জানানো হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement