চলছে মশার লার্ভা বিনাশের কাজ। — ফাইল চিত্র।
গত বছর হুগলিতে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছিলেন ৭ হাজারের বেশি মানুষ। শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া এবং রিষড়া পুরসভা মিলিয়েই ৪ হাজারের বেশি। মৃত্যু হয়েছিল কয়েক জনের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘুম ছুটেছিল প্রশাসনের। অসচেতনতার ফাঁক গলে ডেঙ্গির জীবাণু বহণকারী এডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির মশা যাতে জন্মাতে না-পারে, সে জন্য সতর্ক প্রশাসন। নজর ম্যালেরিয়ার উপরেও।
এ নিয়ে নবান্নের কড়া নির্দেশ রয়েছে। শুরু হয়েছে ডেঙ্গি মোকাবিলা অভিযান। রাজ্য নগর উন্নয়ন সংস্থার (সুডা) পতঙ্গবিদেরা এ বার আগেভাগেই সরেজমিনে পরিদর্শন শুরু করেছেন। শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক সম্রাট চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পতঙ্গবিদদের পরামর্শ মেনে পরিকল্পনামাফিক কাজ চলছে।’’ গত বছর ডেঙ্গির প্রকোপ ছিল অগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, চলতি বছরে হুগলিতে ডেঙ্গি আক্রান্ত দেড়শোর কাছাকাছি। চন্দননগর ও শ্রীরামপুরের পাঁচটি করে, ভদ্রেশ্বরের চার, রিষড়ার তিন, উত্তরপাড়ার দু’টি ওয়ার্ড, শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের রাজ্যধরপুর, রিষড়া, কানাইপুর পঞ্চায়েত নিয়ে ভাবনা রয়েছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভুঁইঞাবলেন, ‘‘ডেঙ্গি প্রতিরোধে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সচেতনতা ছড়ানো হচ্ছে।’’
জানা গিয়েছে, মার্চ থেকে জুন অর্থাৎ বর্ষার আগে এবং জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত, দু’ভাগে ডেঙ্গি মোকাবিলা অভিযান চলবে। শ্রীরামপুর পুরসভা সূত্রের খবর, প্রথম পর্যায়ে সমীক্ষা চালিয়ে মশা জন্মানোর সম্ভাব্য ঝুঁকির জায়গা (রিস্ক সাইড) চিহ্নিত করা হয়েছে। বন্ধ কারখানা, নির্মীয়মাণ বহুতল, অব্যবহৃত জমি, কিছু জলাশয়, রেলের জমি বা বিভিন্ন সরকারি অফিস চত্বর ইত্যাদি মিলিয়ে এমন ১৬৬১টি জায়গা চিহ্নিত হয়েছে। সেই সব জায়গা সাফাই করতে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমির ক্ষেত্রে পুর-কর্তৃপক্ষ মালিককে নোটিস পাঠিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ে সাফাই না করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি কার্যালয়-আবাসনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুডা নোটিস পাঠাবে।
স্যানিটারি ইনস্পেক্টর অনুজ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পুরসভার প্রত্যেক ওয়ার্ডে ৭ জনের দল গড়া হয়েছে সাফাই এবং মশার লার্ভা মারার তেল ছিটানোর জন্য। তারা কাজ করছে বিকেলে। নিয়মিত নজরদারির জন্য পাঁচটি ওয়ার্ড পিছু একটি দল গড়া হয়েছে, যেখানে পুর-স্বাস্থ্যকর্মীও থাকছেন। ইতিমধ্যেই শহরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছেন মহকুমাশাসক এবং সুডার পদঙ্গবিদ। গত বছর এখানে ডেঙ্গি কার্যত ছেয়ে গিয়েছিল। মজে যাওয়া পুকুরও আছে এখানে।
পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ নিয়ে প্রায় একই বক্তব্য উত্তরপাড়া পুর-কর্তৃপক্ষের। পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘প্রচারে আরও জোর দেওয়া হবে। এ জন্য স্কুল-কলেজ, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলছি। পুর-স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি, কাউন্সিলর, অফিসাররাও বাড়ি বাড়ি যাবেন। গত বছরের পরিস্থিতি যাতে না হয়, সেটা চ্যালেঞ্জ।’’ তিনি জানান, পুরসভা গাপ্পি মাছ চাষ করবে। এই মাছ মশার লার্ভা খায়।
গ্রামীণ এলাকার ক্ষেত্রে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা জেলার স্বাস্থ্য তদারকি কমিটির সদস্য সুবীর মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে গত দু’বছরে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে বড় নর্দমা করা হয়েছে ২০-৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে। টিউবওয়েলের গোড়ায় যাতে জল না-জমে, সে জন্য প্রায় এক হাজার টিউবওয়েলে প্ল্যাটফর্মতৈরি করা হয়েছে। বহু জায়গায় ঢাকা নর্দমা করা হয়েছে। ফল, সেখানে আবর্জনা পড়ে জল আটকাচ্ছে না। মশা জন্মানোর উপায়ও থাকছে না।
মশার জন্ম নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা কতটা কাজ দেয়, সেটাই দেখার।