রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এমনই দৃশ্য ধরা পড়ছে। —নিজস্ব চিত্র।
টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায়। এ বার সেই জলের তোড়েই হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে ভেসে গেল এক কিশোরী। বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে মঙ্গলবার দুপুরে উদ্ধার হয়েছে বছর ষোলোর ওই কিশোরীর দেহ। মৃত কিশোরীর নাম রিমা রক্ষিত। সে ক্লাস টেনের ছাত্রী। উদ্ধার করে উদয়নারায়ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
রিমা উদয়নারায়ণপুরের জোকার বাসিন্দা। সে খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই বন্যার জল তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে তীব্র বেগে বয়ে যাচ্ছিল। দুপুরে সেই জলেই কোনও ভাবে পড়ে যায় রিমা। তার পর ভেসে যায়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দুর থেকে তাকে উদ্ধার করেন পরিবারের লোকজন। এর পর রিমাকে উদয়নারায়ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই জানানো হয়, রিমা মারা গিয়েছে। ওই ছাত্রীর বাবা রবীন্দ্রনাথ রক্ষিত পেশায় কৃষক। মেয়ের আমস্কিম মৃত্যুতে শোকাহত তিনি। শোকে আচ্ছন্ন গোটা পরিবার।
মেয়েটির পরিবার জানিয়েছে, স্নান করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল মেয়েটি। জলের স্রোতে ভেসে কিছুটা দূরে একটি পুকুরে পড়ে সে। সাঁতার না জানায়, জল কাটিয়ে বেরোতে পারেনি সে। এই ঘটনায় মেয়েটির পরিবারকে অসতর্কতাকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় বিধায়ক সমীর পাঁজা।
রিমার মৃত্যু নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও, রাজ্য জুড়ে বন্যা পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রকেই দায়ী করেছেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। মঙ্গলবার আমতার ভাটোয়া কুলিয়াঘাটের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল এবং সেচ দফতরের অন্য আধিকারিকরাও। সেখানে সৌমেন অভিযোগ করেন, ‘‘নদীগুলির নাব্যতা কমে গিয়েছে। অথচ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন্দ্র। ডিভিসি জল ছাড়ার আগে কখনও কখনও রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ করে, আবার কখনও কিছু জানায় না।’’ সৌমেনের অভিযোগ, একসঙ্গে দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। অথচ ওই পরিমাণ জলধারণের ক্ষমতাই নেই নদীর। তার জন্যই বার বার বন্যা হচ্ছে।
মঙ্গলবার আমতার দ্বীপ অঞ্চল ভাটোরা কুলিয়াঘাট প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন সৌমেন। সঙ্গে ছিলেন আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল সহ সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা। কুলিয়া এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেন সেচমন্ত্রী। আমতা এবং উদয়নারায়নপুর এর বন্যার জন্য তিনি সরাসরি কেন্দ্রকে দায়ী করেন। নদীর নাব্যতা কমে গেলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন। ফলে ছ’টি জেলায় বন্যা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। কেন্দ্রের তরফে আর্থিক সাহায্য না মিললেও, বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহায়তায় রাজ্য বন্যা প্রতিরোধে বিশেষ পরিকল্পনা করেছে এবং তার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সৌমেন।