বিসর্জনের প্রস্তুতি চুঁচুড়ায়। ছবি: তাপস ঘোষ।
শতবর্ষে পড়ল চুঁচুড়ায় সরস্বতী পুজোর নিরঞ্জন শোভাযাত্রা। আজ, শুক্রবার মাইকের ব্যবহার ছাড়াই সন্ধে ৬টা থেকে ওই শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য শোভাযাত্রা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিল ‘হুগলি-চুঁচুড়া কেন্দ্রীয় সরস্বতী পূজা ও প্রতিমাসজ্জা পরিচালন কমিটি’। বৈঠকে পুলিশ শর্ত দেয়, শোভাযাত্রায় বৈদ্যুতিক মাইক ব্যবহার করা যাবে না। রাজি হয় ওই কমিটি। বৃহস্পতিবার হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার পক্ষ থেকে শোভাযাত্রার পথ পরিষ্কার করা হয়। রাস্তার উপর ঝুলতে থাকা গাছের ডালপালা ছাঁটা হয়।
পুর পারিষদ (স্বাস্থ্য) জয়দেব অধিকারী জানান, পরীক্ষার জন্য আদালতের যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা মেনেই শোভাযাত্রা হবে। হাত-মাইক ছাড়া বৈদ্যুতিক শব্দের প্রয়োগ হবে না। প্রশাসনের সব রকম শর্ত মেনেই ১০০ বছরের এই উৎসব পালন করা হবে। চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, পরীক্ষার্থীদের সমস্যা না হয়, এমন শর্ত মেনে শোভাযাত্রা করলে আপত্তি নেই। শোভাযাত্রায় কোথাও শব্দের উপদ্রব নিয়ে অভিযোগ পেলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। আজ থেকেই শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক।
‘হুগলি-চুঁচুড়া কেন্দ্রীয় সরস্বতী পূজা ও প্রতিমাসজ্জা পরিচালন কমিটি’ গঠিত হয় শতবর্ষ আগে। কমিটির উদ্যোগে প্রথম থেকেই পুজোর পর দিন সন্ধ্যায় এই শোভাযাত্রা হচ্ছিল। চলতি বছর হচ্ছে একদিন পর। কারণ, শনি ও রবিবার পরীক্ষা নেই।
ওই কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক তথা পুরসদস্য (কাউন্সিলর) ঝন্টু বিশ্বাস জানান, মোট ২৮টি কমিটি শোভাযাত্রায় যোগ দেবে। কমিটিগুলি দু'টি ভাগে ব্যান্ডেল চার্চ এবং হুগলি জেলা সংশোধনাগারের সামনে থেকে যাত্রা শুরু করবে। চার্চের সামনে থেকে আসা পুজো কমিটিগুলি চকবাজার থেকে পাঙ্খাটুলি, ঘোলঘাট হয়ে গঙ্গার ধার ধরে ঘড়ির মোড় হয়ে হাসপাতাল রোড ধরে পুরনো দমকল দফতরের সামনে আসবে। অপরদিকে, জেলখানার সামনে থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রাটি গঙ্গার ধার ধরে ঘড়ির মোড় হয়ে হাসপাতাল রোড ধরে পিপুলপাতি থেকে পাঙ্খাটুলি হয়ে ঘোলঘাটে শেষ হবে। লরি ও ট্রলিতে আসা কমিটিগুলির সুসজ্জিত শোভাযাত্রা নিয়ে ২২টি সংস্থা প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছে। শোভাযাত্রার পথে ওই সংস্থাগুলির ক্যাম্পে বিচারকরা থাকবেন। সেখানে সর্বোচ্চ ছ'মিনিট করে দাঁড়িয়ে প্রতিটি কমিটি তাঁদের শিল্পকলা প্রদর্শন করতে পারবে। কোনও কমিটির বাদ্যযন্ত্র থাকলে কিছুক্ষণের জন্য শুধু সেখানেই বাজানো যাবে।
সদর শহরের এই শোভাযাত্রা সংস্কৃতি ও শিল্পকলার মিশেলে পরিণত হয়েছে বলে মানছে শিল্পীমহল। প্রতিমা ও ছোট-ছোট মণ্ডপ সজ্জায় অপরূপ শিল্পকলা তুলে ধরেন শিল্পীরা। প্রবীণ শিল্পী জয়ন্ত ঘোষ জানান, বহু নতুন শিল্পীর কাজের হাতেখড়ি হয় এই শোভাযাত্রায়। পরে সেই সব শিল্পীই কলকাতা-সহ নানা জায়গায় বড়-বড় পুজো মণ্ডপ সাজিয়ে তোলার সাহস পান। শহরে এমন প্রায় পঞ্চাশেক বারোয়ারি পুজো কমিটি রয়েছে যারা সাধারণ মণ্ডপে পুজো করলেও শোভাযাত্রার জন্য আলাদা অপরূপ মণ্ডপ তৈরি করেন। আজ, সন্ধ্যায় তা দেখতেই রাস্তার পাশে ভিড় জমবে বলে আশাবাদী উদ্যোক্তারা।
পার্থ স্মৃতি সঙ্ঘের সদস্য অভিজিৎ দাস বলেন, "শতবর্ষের শোভাযাত্রায় যোগ দিতে করতে পেরে ভাল লাগছে। পরীক্ষার্থীদের বিষয়টি মাথায় রাখব।’’