গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি এবং বাঁধের ছাড়া জলে হুগলির আরামবাগ মহকুমার খানাকুল প্লাবিত। আরামবাগ, পুরশুড়া, তারকেশ্বর, জাঙ্গিপাড়া ব্লকের বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন। আর এর ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষিপ্রধান জেলার সব্জি চাষ। পুজোর মুখে সব্জির দামও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বস্তুত, এই সময় হুগলিতে পটল, টমেটো, ঢ্যাঁড়স, কুমড়ো, বরবটি, করলা, ধনেপাতা এবং ফুলকপি চাষ শুরু হয়। টানা বৃষ্টি এবং বাঁধের জল ছাড়ার ফলে আরামবাগের খানাকুল, পুরশুড়ার অন্তত ১০০ হেক্টর, তারকেশ্বরে ৯০ এবং জাঙ্গিপাড়ায় মোটামুটি ১০৫ হেক্টর জমির সব্জি চাষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ছাড়াও বলাগড়, পোলবা, সিঙ্গুর, হরিপালের বিভিন্ন জায়গায় সব্জি চাষিরা অতি বৃষ্টির জন্য ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বন্যার জল নামার পরেও আরও অন্তত ১০০ হেক্টর জমিতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে হুগলির উদ্যান পালন দফতর ও নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি। হুগলি নিয়ন্ত্রিত বাজারের সম্পাদক এসএফ রহমান বলেন, ‘‘যে ভাবে হুগলি জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে, তাতে সব্জি চাষে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। চাষিরা মাঠে কাজই করতে পারছেন না। বাজারে ফসলের আমদানি কম হচ্ছে। আগামী দিনে সব্জির দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।’’
সিঙ্গুরের এক কৃষক কার্তিক হালদার বলেন, ‘‘এই বৃষ্টির ফলে সমস্ত সব্জি পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এক বিঘা জমিতে চাষের খরচও উঠল না। উপরন্তু আবার চাষ করতে হবে। কিন্তু যে পরিমাণ ক্ষতি হল সেই তুলনায় ক্ষতিপূরণ কী ভাবে পাব জানি না।’’ তিনিও জানাচ্ছেন, বাজারে সব্জি কম থাকায় দাম আরও বাড়বে। হুগলি জেলার কৃষি উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক শুভাশিস গিরিও বলছেন, ‘‘সময় গেলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। বৃষ্টি এবং ডিভিসির জল জমিতে ঢুকে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজ্যে প্রতিটি জেলায় বৃষ্টি হয়েছে। হুগলিতে একটু বেশি ক্ষতির ফলে পুজোর সময় সব্জির দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পুজোতে এমনিতেই সব্জির চাহিদা থাকে। এ ছাড়া, অন্যান্য ফসলের সঙ্গে আগাম ফুলকপি চাষেরও ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য কৃষকদের সব্জি চাষে পলি হাউস বা গ্রিন হাউস ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, হুগলিতে প্রায় দু’ হাজার হেক্টর জমিতে সব্জি চাষ হয় এই সময়। প্রায় সাড়ে তিনশো হেক্টর জমির সবজি চাষ নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। কৃষকরা জানচ্ছেন, এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।