Teesta Flood

তিস্তায় ভেসে আসা আরও দেহ উদ্ধার, ছবি দিল সেনা, দুশ্চিন্তা বাড়ছে সিকিমে আটক পর্যটকদের নিয়ে

তিস্তার অববাহিকা এবং উত্তরবঙ্গের সমতলের একাংশ জুড়ে বৃহস্পতিবার দিনভর উদ্ধার হল মৃতদেহ। কোনওটি সেনা জওয়ানের, কোনও সাধারণ মানুষের।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:১৫
Share:
০১ ১৫

বুধবার গোটা দিন জুড়ে তাণ্ডবলীলা চালানোর পর থেকে ক্রমশ শান্ত হয়েছে তিস্তা। বৃহস্পতিবার সমতলের তিস্তায় লাল-হলুদ সব সর্তকতা উঠেছে। আপাতত বিপদসীমার নীচ দিয়েই বইছে নদী। পাহাড় জুড়ে জল কিছুটা কমতেই বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে ধ্বংসলীলার ছবি।

০২ ১৫

কোথাও কাদায় বসে গিয়েছে দোকান, বাড়ি। কোথাও নদীতে অর্ধেক ডুবে গিয়েছে তিনতলা বাড়ি। কোথাও আবার জল নামতেই দেখা গিয়েছে সেনাবাহিনীর সারি সারি ট্রাকের কঙ্কালসার চেহারা, মঙ্গলবার রাতে যেগুলি ভেসে গিয়েছিল।

Advertisement
০৩ ১৫

তিস্তার অববাহিকা এবং উত্তরবঙ্গের সমতলের একাংশ জুড়ে বৃহস্পতিবার দিনভর উদ্ধার হল মৃতদেহ। কোনওটি সেনা জওয়ানের, কোনও সাধারণ মানুষের। কোনওটি উদ্ধার হল জলপাইগুড়ি থেকে, কোনওটি আবার কোচবিহার থেকে। বৃহস্পতিবার নবান্ন জানিয়েছে, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি এবং কোচবিহার জেলার বিভিন্ন এলাকায় তিস্তা থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ১৮টি দেহ উদ্ধার হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চার জন সেনা জওয়ান এবং দু’জন সাধারণ নাগরিক বলে এখনও শনাক্ত করা গিয়েছে। বাকিদের শনাক্তকরণের কাজ চলছে।

০৪ ১৫

বাংলাদেশে ভেসে যাওয়া একটি দেহ উদ্ধার করে বিএসএফের হাতে তুলে দিয়েছে বিজিবি। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া তিস্তাপার থেকেও বেশ কয়েকটি দেহ উদ্ধার হয়েছে। ময়নাগুড়ি এবং ক্রান্তি থেকেও মিলেছে দেহ উদ্ধারের খবর। বৃহস্পতিবার অবশ্য সেনার তরফে ২২ জনের দেহ উদ্ধারের খবর মিলেছে। সেনা জানিয়েছে, ১৫টি দেহ মিলেছে জলপাইগুড়ি থেকে। কোচবিহার এবং শিলিগুড়ি থেকে যথাক্রমে তিনটি এবং চারটি করে দেহ মিলেছে। উদ্ধার হওয়া ২২ জনের মধ্যে চার জন সেনা জওয়ান এবং সাধারণ নাগরিক। এক জনের দেহাংশ উদ্ধারের খবরও দিয়েছে সেনা।

০৫ ১৫

বৃহস্পতিবার তিস্তা কিছুটা শান্ত থাকায় উদ্ধারকাজ শুরু করা গিয়েছিল। বৃষ্টি ও আবহাওয়া ভাল হলেই সেনা হেলিকপ্টারে সিকিম থেকে পর্যটকদের উড়িয়ে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছনোর কাজ শুরুর কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন প্রান্তে আটক পর্যটকদের দফায় দফায় হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে মঙ্গনে এনে সেখান থেকে গ্যাংটকে ফেরানোর ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতীয় সেনার ত্রিশক্তি কোর উত্তর সিকিমের চুংথাং, লাচুং এবং লাচেন এলাকায় আটকে পড়া ১৪৭১ জন নাগরিক ও পর্যটকদের মোবাইল সংযোগ পুনঃস্থাপন করার কাজও শুরু করেছে।

০৬ ১৫

সিকিম সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, উত্তর সিকিমের লাচুং, লাচেনে যে সব পর্যটকেরা রয়েছেন, তাঁরা সুরক্ষিত রয়েছেন। আবহাওয়া ঠিক থাকলে শুক্রবার থেকে উদ্ধারকাজ শুরু করা হবে। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে পর্যটকদের সিকিমে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। সিকিম সরকার অনুরোধ করেছে হোটেল, হোমস্টে যেখানে সম্ভব হবে পর্যটকদের বিনা খরচে রাখা এবং পরিষেবা দেওয়ার।

০৭ ১৫

পর্যটন দফতরের উত্তরবঙ্গের ডেপুটি ডিরেক্টর জ্যোতি ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের তরফে সিকিম সরকারের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, উত্তর সিকিমেও পর্যটকেরা সুরক্ষিত রয়েছেন। আবহাওয়া ঠিক থাকলে শুক্রবার থেকে তারা উদ্ধারকাজ শুরু করবে।’’ তিনি জানান, পর্যটকদের পরিজনেরাও যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি, তাঁদের ছবি, মোবাইল নম্বর সিকিমের আধিকারিকদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিপর্যস্ত এলাকার রাস্তা ঠিক করার চেষ্টা হচ্ছে। হেলিকপ্টারেও উদ্ধারকাজ করা হবে। জখম, বয়স্কদের অগ্রাধিকার দিয়ে উদ্ধার শুরু হবে।

০৮ ১৫

পরিস্থিতির জেরে নাথু লা এবং ছাঙ্গু লেকে পর্যটকদের ঘোরার পারমিট অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করেছে সিকিম সরকার। প্রশাসনের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, এখনও অন্তত আড়াই হাজারের উপরে পর্যটক বিভিন্ন এলাকায় আটকে রয়েছেন। বেসরকারি হিসেবে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আটকে থাকা পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই বেশি।

০৯ ১৫

নবান্ন জানিয়েছে, মঙ্গলবার নিখোঁজ হওয়া ১১ জনের খোঁজ মেলেনি। এনডিআরএফের দু’টি দল জলপাইগুড়িতে পাঠানো হয়েছে। এসডিআরএফের চারটি দল ভাগ করে দেওয়া হয়েছে জলপাইগুড়ি, কালিম্পং এবং কোচবিহারের মধ্যে। এখনও পর্যন্ত চার জেলা মিলিয়ে ২৫টি ত্রাণশিবিরে ৩ হাজার ৪৮৪ জন রয়েছেন।

১০ ১৫

সিকিমে যে সব পর্যটকেরা আটকে পড়েছেন, ৪৮ ঘণ্টা পরেও তাঁরা বাড়ি না ফেরায় উৎকণ্ঠায় রয়েছে বহু পরিবার। লাচেন এবং লাচুংয়ে যাঁরা আটকে পড়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সেনার তরফে একটি হোয়াট্‌সঅ্যাপ নম্বর দেওয়া হয়েছে— ৯৯০৬২০০২০৫।

১১ ১৫

প্রবল বৃষ্টিতে শিলিগুড়ি থেকে সিকিম পর্যন্ত ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক তিন জায়গায় ধসে তিস্তায় চলে গিয়েছে। যার জেরে অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। শুধু সিকিমই নয়, জাতীয় সড়কে ধসের কারণে যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে কালিম্পং সঙ্গেও। এই পরিস্থিতিতে ছোট গাড়িতে বিকল্প পথে আটকে থাকা কিছু কিছু পর্যটক বৃহস্পতিবার নামতে পেরেছেন শিলিগুড়ি সমতলে। পুলিশ-প্রশাসন থেকেও চেষ্টা করা হচ্ছে তাঁদের সাহায্য করার।

১২ ১৫

জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ছাড়াও কালিম্পং এবং দার্জিলিং হয়ে সিকিমে যাওয়া যায়। মূলত ছোট গাড়িই যাওয়ার রাস্তা রয়েছে। পূর্ব সিকিমের গ্যাংকট থেকে পেডং, আলগাড়া হয়ে লাভা, গরুবাথান। সেখান থেকে গজলডোবা পর্যন্ত যাওয়া যায়। পশ্চিম সিকিমের নামচি, রাবাংলা, পেলিং রুটের পর্যটকেরা দার্জিলিঙের সিংলা বাজার দিয়ে সমতলে আসতে পারেন।

১৩ ১৫

কিন্তু প্রশাসনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ— উত্তর সিকিমে যাঁরা আটকে রয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা। কারণ, উত্তর সিকিম থেকে তাঁদের প্রথমে পৌঁছতে হবে গ্যাংটকে। সেখান থেকে তাঁরা কালিম্পং হয়ে নামতে পারবেন। কিন্তু তিস্তার হড়পা বানের তাণ্ডবে গ্যাংটক থেকে উত্তর সিকিমের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। সেখানে রাস্তা এখন জলের তলায়। উড়ে গিয়েছে সেতু। অন্য দিকে, বাকি রাস্তাগুলিও যাতায়াতের অযোগ্য। গ্যাংটকের প্রধান সড়কেই জমে রয়েছে কয়েক ফুটের পলি। যার জেরে যান চলাচল কার্যত বন্ধ। সে ক্ষেত্রে অনেকটা ঘুরে ছোট ছোট পকেট রুট ধরে সিংথাম, ডুঙ্গা বস্তি, রংপো হয়ে কালিম্পঙে ঢুকছেন অনেকে।

১৪ ১৫

রাজ্যের ইকো ট্যুরিজ়ম দফতরের চেয়ারম্যান রাজ বসু বলেন, ‘‘কালিম্পঙের রাস্তাতেও ছোটখাটো ধস হচ্ছে। সেগুলো দ্রুত সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হচ্ছে। গত কাল (বুধবার) বহু গাড়ি সিকিম থেকে কালিম্পং হয়ে নেমেছে। অন্য দিকে, দার্জিলিঙের সিংলা বাজার এলাকা পর্যন্ত রাস্তায় কোনও সমস্যা নেই। সিকিমের দিকে কী পরিস্থিতি, জানা নেই। তবে বেশ কিছু গাড়ি সিংলা বাজার হয়ে নামছে। তাতে বোঝা যাচ্ছে, রাস্তা ঠিক রয়েছে। কিন্তু উত্তর সিকিমের সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ স্থাপন করা যাচ্ছে না। সিকিম সরকার, সেনা উত্তর সিকিমের দিকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে। অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কালিম্পং ও দার্জিলিঙে ব্যাপক কাজ করে চলেছে। কোনও প্রকার অসুবিধায় সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

১৫ ১৫

তিস্তার জল নামলেও আশঙ্কা কমেনি কালিম্পঙের তিস্তাবাজার এলাকার বাসিন্দাদের। তিস্তার জলে তলিয়ে গিয়েছে সেখানকার প্রায় ১৪টি বাড়ি। দোকানপাটও ভেসেছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ফের এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাতেই এখন ঘুম উড়েছে সেখানকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের। তিস্তার পাশে দোকানগুলির নীচ থেকে ধসে যাচ্ছে মাটি। এমনকি, সেখানে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কেও নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। তিস্তার স্রোতে যে কোনও সময় সেখানেও ধসে যেতে পারে জাতীয় সড়ক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement