যাচাই চলছে শ্যামপুর-২ ব্লকে
Cyclone Yaas

ইয়াসে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’দের অর্ধেকই ভুয়ো, দাবি

শুধুমাত্র পরিদর্শনের ভিত্তিতেই ক্ষতিপূরণ-প্রাপকদের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে না বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২১ ০৭:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

নুরুল আবসার
শ্যামপুর

Advertisement

ইয়াসে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদনকারী সাড়ে ৬ হাজার গ্রামবাসীর মধ্যে অর্ধেকই ভুয়ো!

তেমনই দাবি করেছে হাওড়ার শ্যামপুর-২ ব্লক প্রশাসন। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। কারণ, সব আবেদনপত্র এখনও যাচাই করা হয়নি। অবশ্য ওই ব্লকই নয়, শ্যামপুর-১, উলুবেড়িয়া-১, বাগনান-২, আমতা-২ এবং সাঁকরাইল ব্লক থেকেও প্রচুর ভুয়ো আবেদনপত্র জমা পড়েছে বলে প্রশাসনের দাবি।

Advertisement

গত বছর আমপানের ক্ষতিপূরণ বিলিতে প্রথম দফায় দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের বিস্তর অভিযোগ উঠেছিল মূলত পঞ্চায়েত এবং কিছু পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার ইয়াসের ক্ষতিপূরণ বিলির আগে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করার কাজে কোমর বেঁধেছে প্রশাসন। এই প্রক্রিয়ায় কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী বা পঞ্চায়েতের কোনও সদস্য, পদাধিকারীকে
রাখা হয়নি।

কী ভাবে ভুয়ো আবেদনকারী চিহ্নিত হল?

শ্যামপুর-২ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইয়াসের দিন রূপনারায়ণের জলোচ্ছ্বাসে শ্যামপুর-২ ব্লকের পাঁচটি পঞ্চায়েত প্লাবিত হয়েছিল। সরকারের নির্দেশমতো ২-১৮ জুন পর্যন্ত ওই এলাকায় শিবির করে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন নেওয়া হয়। মোট সাড়ে ছয় হাজার আবেদনপত্র জমা পড়ে। সেগুলি এখন খতিয়ে দেখার কাজ চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০% শতাংশ আবেদনকারীই ভুয়ো বলে দেখা গিয়েছে। ৩০ জুন পর্যন্ত আবেদনপত্র যাচাই চলবে।
তারপরে ক্ষতিগ্রস্তদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হবে।

আবেদনপত্র খতিয়ে দেখার জন্য ৬০টি বিশেষ দল করা হয়েছে। এক-একটি দলে আছেন তিন জন করে। সবাই সরকারি কর্মচারি। তাঁরা প্রত্যেক আবেদনকারীর বাড়িতে যাচ্ছেন। আবেদনে ক্ষতির বিবরণের সঙ্গে তাঁরা বাস্তব অবস্থা মেলাচ্ছেন। আবেদনকারীকে তাঁর বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে ছবি নেওয়া হচ্ছে। পরিদর্শন ব্যবস্থাটিকে রাজ্য সরকারের বিশেষ ‘অ্যাপ’-এর মাধ্যমে ‘জিও ট্যাগিং’ করা হয়েছে। ফলে, নবান্ন থেকে শুরু করে প্রশাসনের যে কোনও স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা চাইলে সেই ‘অ্যাপ’ খুলে কী ভাবে পরিদর্শন হচ্ছে, তা সরাসরি দেখতে পাচ্ছেন।

তবে, শুধুমাত্র পরিদর্শনের ভিত্তিতেই ক্ষতিপূরণ-প্রাপকদের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে না বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা। তিনি জানান, দুর্যোগের ঠিক পরেই একবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা কম্পিউটারে ‘আপলোড’ও করা হয়েছে। পরিদর্শনের শেষে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তার সঙ্গে ‘আপলোড’ করা তথ্য মিলিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দুইয়ের সমন্বয়েই তৈরি হবে চূড়ান্ত
তালিকা। এতেই ভুয়ো আবেদনকারীও চিহ্নিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের ওই কর্তা বলেন, ‘‘দুর্যোগে হয়তো কোনও বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছিল। পরে বাড়ির মালিক তা মেরামত করে নেন। পরিদর্শনের সময়ে তা হলে আগের ক্ষতি ধরা পড়বে না। সে জন্যই দুর্যোগের ঠিক পরেই ক্ষতির যে বিবরণ কম্পিউটারে ‘আপলোড’ করা হয়েছিল, সেটি দেখার প্রয়োজন আছে। সরকারের নির্দেশ, ভুয়ো আবেদনকারী যেমন বাদ পড়বেন, তেমনই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে বাদ না পড়েন, সেটাও দেখা হবে।’’

জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, কোনও ভুয়ো আবেদনকারী যাতে ক্ষতিপূরণ না পান, তা জেলা প্রশাসনকে দেখতে বলা হয়েছে। দলের এক নেতা বলেন, ‘‘আমফানের পুনরাবৃত্তি হোক, সেটা আমরা চাই না।’’

শ্যামপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জুলফিকার মোল্লা জানান, পরিদর্শনকারী দলের সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কোনও নেতা বা পঞ্চায়েত সদস্যের সুপারিশ অগ্রাহ্য করতে। তালিকা নিয়ে যদি কোনও বিতর্ক ওঠে তা হলে পরিদর্শনকারী ‌দলকেই তার দায়িত্ব নিতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement