মাস্ক ছাড়াই হাটের পথে। মঙ্গলবার, হাওড়ায়। নিজস্ব চিত্র।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় প্রায় আড়াই মাস বন্ধ থাকার পরে মঙ্গলবার থেকে পুরোপুরি ভাবে চালু হল হাওড়ার মঙ্গলাহাট। আর প্রথম দিনেই কোভিড-বিধির তোয়াক্কা না করে ভিড় উপচে পড়ল সেখানে। যা দেখে রীতিমতো উদ্বিগ্ন হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসকদের একাংশ।
ওই চিকিৎসকদের বক্তব্য, সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ যখন আসন্ন, এমন পরিস্থিতিতে এ ভাবে মঙ্গলাহাট খুলে যাওয়ায় ফের লাফিয়ে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া হল। যদিও পুলিশের দাবি, এ দিন হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের করোনা-বিধি মেনে চলার জন্য মাস্ক বিতরণ এবং মাইকে প্রচার করা হয়েছে। এমনকি, বিধি না মানার জন্য এ দিন গ্রেফতারও করা হয়েছে সাত জনকে।
করোনার প্রথম ঢেউয়ে প্রায় ছ’মাস বন্ধ ছিল এশিয়ার বৃহত্তম এই হাট। ফলে বিপাকে পড়েছিলেন এই হাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত প্রায় ৬০-৬৫ হাজার মানুষ। এর পরে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসায় ফের চলতি বছরের ১৭ মে থেকে হাট পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে গত সপ্তাহে শুধুমাত্র শাড়ির হাট আংশিক ভাবে চালু হয়েছিল।
সম্প্রতি করোনার দাপট মাসখানেক কম থাকায় হাটের ব্যবসায়ীদের বারংবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন এ দিন থেকে হাট চালু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাধারণত মঙ্গলাহাটে এক দিনে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ আসেন। এত মানুষ যাতে একসঙ্গে না আসেন, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রত্যেক ক্রেতা-বিক্রেতাকে মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার-সহ দূরত্ব-বিধি মেনে চলতে হবে।
কিন্তু এ দিন সকালে হাট শুরু হতেই কোভিড-বিধি কার্যত শিকেয় ওঠে। অভিযোগ, দূরত্ব-বিধি মেনে চলা তো দূর অস্ত, অনেকে মাস্ক না পরেই হাটে জিনিস কেনাবেচা করেন। যদিও পুলিশের দাবি, হাট সংলগ্ন হাওড়া ময়দান এলাকায় তাদের প্রচার ভ্যান কোভিড-বিধি মেনে চলার জন্য ক্রমাগত প্রচার করেছে।
হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘সকাল থেকেই পুলিশের ভ্যান প্রচার করেছে। যাঁরা মাস্ক পরেননি তাঁদের মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রোজ রাত ৯টার পরে প্রতিটি এলাকায় টহল দেওয়া হচ্ছে।’’
যদিও প্রচারে যে কাজ বিশেষ হয়নি, এ দিনের মঙ্গলাহাটের ছবিতেই তা স্পষ্ট। এ দিনের হাটের পরিস্থিতি দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসকেরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘এ ভাবে হাটে কোভিড-বিধি না-মানা হলে মারাত্মক ভাবে করোনা বাড়তে পারে। এখনই করোনা কমে গিয়েছে বলে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা বুমেরাং হতে পারে।’’
মঙ্গলাহাট সমন্বয় কমিটির সহ-সম্পাদক কানাই পোদ্দার বলছেন, ‘‘হাটে কোভিড-বিধি মানার জন্য সব ব্যবসায়ীকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সব ক’টি সংগঠনকে নিয়ে একসঙ্গে বৈঠকে বসে এ ব্যাপারে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব।’’