ডোমজুড় গ্রামীণ হাসপাতালের ডায়ালিসিস ইউনিট। —নিজস্ব চিত্র।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর বলছে, গ্রামীণ হাসপাতালে ডায়ালিসিস ইউনিট থাকার কথা নয়। সে বিষয়ে তাদের কোনও পরিকল্পনাও নেই। অথচ ডোমজুড় গ্রামীণ হাসপাতালের জমিতে দিব্যি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে একটি ভবন, যেটা কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছে। সেখানে একটি ডায়ালিসিস মেশিন বসানো হয়েছে। সব মিনিয়ে খরচ পড়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। পুরো কাজটাই গত কয়েক বছর ধরে চলেছে ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে।
শুধু তাই নয়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইউনিটের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করে দিয়েছেন। কিন্তু এখনও সেখানে পরিষেবা না চালু না হওয়ায় জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে তদবির শুরু করেছে পঞ্চায়েত সমিতি। আর সেখানেই জুটেছে প্রত্যাখ্যান।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডলের সাফ জবাব, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে কাজটি করেনি পঞ্চায়েত সমিতি। ওই ইউনিট চালু নিয়ে আমাদের কোনও পরিকল্পনা নেই। ফলে ওটা চালুর আপাতত কোনও প্রশ্ন নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘গ্রামীণ হাসপাতালে ওই ইউনিট চালুর পরিকাঠামোই নেই। এই পরিষেবা চালুর জন্য নেফ্রোলজিস্ট প্রয়োজন। সেই চিকিৎসকও আমাদের কাছে নেই।’’
হাওড়া শহর ঘেঁষা ব্লকগুলির মধ্যে অন্যতম ডোমজুড়। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির দাবি, এলাকাবাসীকে ডায়ালিসিস-এর মতো জরুরি পরিষেবার সুবিধা দিতেই গ্রামীণ হাসপাতালের জমিতে একটি ভবন তৈরি করে মেশিন বসানো হয়। পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে হাসপাতালের সামনের অংশের জমি চাওয়া হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে কাজ এগিয়েছে।
বিষয়টি মানতে চাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক ঊর্ধ্বতন স্বাস্থ্যকর্তা জানান, পঞ্চায়েত সমিতির তরফে জমি চাওয়ার পর তা দেওয়া হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সেখানে কী কাজ হবে, তা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।
ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ সুবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিধায়ক তহবিল ও পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অর্থে কাজটি হয়েছে। এখন জানতে পারছি, গ্রামীণ হাসপাতালে এই পরিষেবা চালু করা যাবে না। সমস্যা মেটানোর
চেষ্টা চলছে।’’ কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কেন? তার জবাব মেলেনি।
জগৎবল্লভপুরের বিধায়ক তথা ডোমজুড় গ্রামীণ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সীতানাথ ঘোষ অবশ্য এখনই হাল ছাড়তে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘‘পদ্ধতিগত সমস্যার কারণে পরিষেবা চালু হতে দেরি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী যে প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন, তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে না।’’
বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। বিজেপির হাওড়া জেলা সদর সম্পাদক
অনুপম ঘোষের কথায়, ‘‘এটা তো একটা বড় দুর্নীতি। যেখানে যেটা হওয়ার কথা নয়, সেখানে তৃণমূলের নেতারা সেটা করে দিচ্ছেন। এ বার আব্দার ওই ইউনিট চালু করে দিতে হবে। ভবন তৈরি, মেশিন আনার জন্য যে যে টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে, সেটা আসলে তৃণমূল নেতার পকেটে ঢুকেছে।’’
জেলার এক যুব বাম নেতা হেসে বলেন, ‘‘এই রাজ্য তো এখন মগের মুলুক। মুখ্যমন্ত্রী ওটা কেন উদ্বোধন করেছেন, তা উনিই জানেন। এখন সেটা চালু না করা গেলে তো তৃণমূলের মুখ পুড়বে। তাই নিয়ম উড়িয়ে ওটা চালু হতেই পারে!’’