টিনে ঘেরা এই অস্থায়ী অফিসে বসেই চলে কাজ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
অফিস বলতে টিন দিয়ে ঘেরা একটি মাত্র ঘর। সেখানে না আছে কম্পিউটারের ব্যবস্থা, না আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। বর্ষায় সেই টিনের চালের ঘরে জল পড়ে, গরমে টিনের তাপে প্রাণ বেরোনোর উপক্রম হয়। হাওড়ার সাঁতরাগাছি বাস টার্মিনাসে ৬-৮ ফুট চওড়া, ১৩-১৪ ফুট লম্বা ওই ঘরটিই আসলে কলকাতা ট্রাম কোম্পানির (সিটিসি) টিকিটঘর। আবার সেটিই ব্যবহৃত হচ্ছে হাওড়ার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের শাখা অফিস হিসাবে। ওই ঘরের দমবন্ধ করা পরিবেশে বসেই কাজ করেন আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের টেকনিক্যাল ইনস্পেক্টরেরা। লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীদের পরীক্ষা নেওয়ার পরে সেখান থেকেই দেওয়া হয় ফিট সার্টিফিকেট বা গাড়ির শংসাপত্র।
অথচ, গত ৩১ জানুয়ারি ঘটা করে অনুষ্ঠান করে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, লাইসেন্স পেতে বা ফিট সার্টিকেট নিতে আর হয়রানি নয়। সবটাই মিলবে এক ছাতার তলায়। সাঁতরাগাছি বাস টার্মিনাসে ওই অনুষ্ঠানে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী ঘোষণা করেছিলেন, ওই টিনের ঘরের জায়গায় আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের একটি আধুনিক মানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শাখা অফিস তৈরি হবে। সেখানেই বসবেন দফতরের টেকনিক্যাল ইনস্পেক্টর ও কর্মীরা। লাইসেন্স বা ফিট সার্টিফিকেট পেতে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের অফিস থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে সাঁতরাগাছি বাস টার্মিনাসে আর ছোটাছুটি করতে হবে না। তা মিলবে ওই অফিস থেকেই। একই সঙ্গে চালকের পরীক্ষা নেওয়ার দিন হাতে হাতেই তাঁদের লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেছিলেন মন্ত্রী।
কিন্তু বাস্তব বলছে, সেই ঘোষণার প্রায় এক বছর পরেও গুরুত্বপূর্ণ ওই অফিস আজও তৈরি হয়নি। সাঁতরাগাছি বাস টার্মিনাসে গিয়ে দেখা গেল, সিটিসি-র ওই টিকিট কাউন্টারে বসে কাজ করছেন টেকনিক্যাল ইনস্পেক্টররা। তাঁদের নেই কম্পিউটার, নেই উপযুক্ত বসার ব্যবস্থাও। এরই মধ্যে গাড়ি চালানোর পরীক্ষা দিতে আসা আবেদনকারীদের অপেক্ষা করার জন্যও নেই কোনও বসার ব্যবস্থা। ফলে ঘরের সামনে ছাউনির নীচে দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের। সেই ছাউনিক টিনও কেউ বা কারা চুরি করে নিয়েছে। ফলে গ্রীষ্ম, বর্ষায় খোলা মাঠে দাঁড়িয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় অনেককে।
হাওড়ার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই জায়গাটিকে অফিসে পরিণত করার নকশা হয়ে গিয়েছে। পরীক্ষা দিতে বা সিএফ করাতে আসা লোকজন কোথায় বসবেন, সে জন্য নকশায় প্রতীক্ষালয়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। বাস টার্মিনাসের জমিটি যেহেতু হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্সের, তাই ওই সংস্থা স্থায়ী অফিসের নকশা করে পরিবহণ দফতরে জমা দিয়েছে। অভিযোগ, তার পরেও ফাইলটি মাসের পর মাস পড়ে রয়েছে দফতরের টেবিলেই।
এ বিষয়ে হাওড়ায় নবনিযুক্ত আরটিও অশোক ঘোষ বলেন, ‘‘লার্নার টেস্ট, বায়োমেট্রিক, স্ক্রুটিনি, ফাইনাল টেস্ট— সবই হয়ে যাচ্ছে ওই জায়গায়। মন্ত্রীর ঘোষণা মতোই কাজ হচ্ছে। তবে হাতে হাতে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। কুরিয়র মারফত লাইসেন্স পৌঁছচ্ছে আবেদনকারীর কাছে।’’ তিনি আরও জানান, কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ধারে সাঁতরাগাছির দূরপাল্লার বাস টার্মিনাসে পাঁচ জন ইনস্পেক্টর ওই ঘরে বসে ল্যাপটপে কাজগুলি করেন। পরিবহণমন্ত্রীর নির্দেশ মতোই নিয়মিত এই কাজ চলছে। তবে আরটিও-র কথায়, ‘‘পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। আশা করা যায়, সেগুলির দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।’’