এমন বেহাল আবাসনেই কোনওক্রমে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা। শ্রমিক আবাসনে সম্প্রতি সেপটিক ট্যাঙ্ক খালি করার কাজ শুরু হয়েছে। নিজস্ব চিত্র
চন্দননগর শহর থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন এই ওয়ার্ড। এলাকাটি একসময়ে শহরের বাইরে ফরাসিদের বিনোদনের একটি জায়গা ছিল। একদিকে গঙ্গা। তিন দিক চাঁপদানি ও ভদ্রেশ্বর পুরসভার ওয়ার্ড দিয়ে ঘেরা। এলাকাবাসীর কাছে এটি ‘ছিটমহল’ বলে পরিচিত।
বৈদ্যবাটীর দিক থেকে জিটি রোড ধরে শহরে ঢোকার প্রায় ৪ কিলোমিটার আগে ডান পাশে চাঁপদানির নর্থব্রুক জুটমিলের সাহেবকুঠি থেকে শুরু হয়ে মিলের গৌরহাটি রেলগেট পর্যন্ত ওয়ার্ডটির অবস্থান। এখানে রয়েছে দু’টি শ্রমিক আবাসন, ইএসআই হাসপাতাল, চিকিৎসক, নার্স, সাফাইকর্মীদের আবাসন, গৌরহাটি ফেরিঘাট। জনসংখ্যা খুবই কম। দু’টি শ্রমিক আবাসনে মূলত ডালহৌসি ও নর্থব্রুক জুটমিলের শ্রমিক পরিবারের লোকজনের বাস।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রায় ৬০ বছরের পুরনো আবাসনগুলিতে রক্ষণাবেক্ষণ নেই। বর্ষায় ছাদ থেকে জল পড়ে। নেই সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা। পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। শৌচালয়, সেপটিক ট্যাঙ্ক দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হয় না।
ইএসআই হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসকদের দু’টি আবাসনের চৌহদ্দি আগাছায় ঢেকেছে। কংক্রিটের চাঙর জীর্ণ লোহার রডে আটকে ঝুলছে। আবাসন কার্যত ভুতুড়ে বাড়ির চেহারা নিয়েছে। তার মধ্যেই মাথা গুঁজে থাকতে হচ্ছে হাসপাতালের অস্থায়ী সাফাইকর্মী এবং নির্মাণকর্মীদের। তাঁদের আশঙ্কা, যে কোনও মুহূর্তে আবাসন দু’টি ভেঙে পড়তে পারে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘বিপজ্জনক বাড়ি’র ফ্লেক্স লাগিয়ে দায় সেরেছে। গৌরহাটি ফেরিঘাট বন্ধ থাকায় মিলের শ্রমিকদের ঘুরপথে গঙ্গা পারাপার করতে হয়। শ্রমিক আবাসনের বাসিন্দা আফিয়া খাতুন, পার্বতী কাহার, রুখসানা বিবিদের খেদ, ‘‘পুরসভার পরিষেবা এখানে এসে পৌঁছয় না। আগে নিয়মিত সাফাই হত। এখন বন্ধ। ছাদ নষ্ট। ঘরে জল পড়ে। ট্যাপকলের জলে নোংরা বের হয়। খাওয়া যায় না। ওই জল খেলে শরীর খারাপ হয়। আবাসন চত্বরের বাহিরে জিটি রোডের পাশে কল থেকে খাওয়ার জল বয়ে আনতে হয় সকলকে।’’
স্থানীয় এক কলেজ ছাত্রী বলেন, ‘‘সরকারি আবাসনে ভাড়া দিয়ে থাকি। পুর-পরিষেবা কিছুই মেলে না। পুরবোর্ড ভেঙে যাওয়ার পরে তো আরও যাচ্ছেতাই পরিস্থিতি হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন শংসাপত্র নিতে দৌড়তে হয় পুরসভায় অথবা বিধায়কের কাছে। একটা কাজের জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। কয়েক দিন হল সেপটিক ট্যাঙ্ক খালি করার কাজ শুরু করেছে।’’
এই এলাকায় শ্রমিক মঙ্গল কেন্দ্র রয়েছে। পুরসভার তত্বাবধানে এখানে মহিলাদের সেলাই শেখানো হত। খেলার সরঞ্জাম ছিল। ছোটদের বল দেওয়া হত। এখন সব বন্ধ। ভবনের চারপাশে জঙ্গল।
এই ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন বামফ্রন্ট জিতে আসছে। গত পুরভোটে সিপিএমের গোপাল রজক তৃণমূলের মঙ্গল বাশফড়কে ১৯৪ ভোটে হারান। এ বার ভোটে সিপিএমের স্বরূপ ঘোষ, তৃণমূলের বিনয়কুমার সাউ ও বিজেপির দীপা চৌধুরী ভোটে লড়বেন। তিন জনই ভোটের ময়দানে নতুন।