চুঁচুড়ার মুখোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গা প্রতিমা। — নিজস্ব চিত্র।
সন্ধিপুজো হয় না হুগলির চুঁচুড়ার মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজোয়। এর পিছনে রয়েছে এক মর্মান্তিক ইতিহাস। সেই নিয়ম পালিত হয়ে আসছে আজও।
কথিত আছে, জমিদারবাড়ির ঠাকুর দালানে সন্ধিপুজো চলার সময় সকলের অলক্ষ্যে মুখোপাধ্যায় পরিবারের এক মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। সেই মেয়েকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি কোথাও। দেখা যায়, দুর্গা প্রতিমার মুখে সেই মেয়ের পোশাকের টুকরো লেগে রয়েছে। এই খবরে বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। পুজো শেষ হয় ঠিকই। তবে পরের বছর থেকে সন্ধিপুজোই বন্ধ করে দেওয়া হয়। অষ্টমী তিথি ছেড়ে নবমী তিথিতে পড়ার সন্ধিক্ষণে হয় সন্ধিপুজো। দুর্গা পুজোয় সেই বিশেষ পুজো বন্ধ হয়ে যায় মুখোপাধ্যায় পরিবারে। সন্ধি পুজোর সময় প্রতিমার সামনে প্রদীপ জ্বালানো হয়। তবে পুজোর বাকি নিয়ম পালন করা হয় বিধি মেনেই।
এই পুজো এ বার ৪২৩ বছরে পা দিল। এক সময় উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরে পুজো হত। পরে চুঁচুড়া কামারপাড়ায় জমিদারি পত্তন করেন মুখোপাধ্যায়রা। পুজোও চলে আসে চুঁচুড়ায়। এক সময় যে পুজোয় জাঁকজমক ছিল তা এখন কৌলিন্য হারিয়েছে। জমিদার বাড়ির বিরাট ঠাকুরদালান ধ্বংস হয়েছে আগেই। বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা প্রাচীন এই পুজোকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।সত্তরের দশকে পুজো না হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ছোটো প্রতিমা এনে কোনওক্রমে পুজো করা হয়। কথিত আছে, মা দুর্গা স্বপ্নে জানান, বড় প্রতিমা গড়ে পুজো করতে। সেই থেকে আবার বড় প্রতিমা গড়ে পুজো শুরু হয়।
এক সময় বলি প্রথা চালু ছিল। তাও বন্ধ হয়েছে বহু দিন। পুজোর তিন দিন খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হয়। দশমীতে পান্তাভাত, কচু শাক এবং ইলিশ মাছ ভোগ দেওয়া হয় এখনও। বর্তমান প্রজন্মের সদস্য প্রভাত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেকেই বাইরে থাকেন। তবে পুজোর সময় সকলে আসেন। বাড়ি তখন ভরে ওঠে। গমগম করে।’’
মুখোপাধ্যায় পরিবারের জামাই প্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চুঁচুড়ায় এ বাড়ির জামাই হয়ে এসেছিলাম। এসে থেকেই দেখছি পুজো হয় ।ধীরে ধীরে পরিবারের লোকসংখ্যা কমছে। এখন পুজোর দায়িত্ব এসে পড়েছে আমার উপর। আমারও বয়স হয়েছে। আগামিদিনে প্রাচীন এই পুজোকে এগিয়ে নিয়ে চলাই হয়তো কঠিন হবে।’’