জয়পুরের এই খাল থেকে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়ের বস্তা। নিজস্ব চিত্র Sourced by the ABP
আট মাস ধরে নিখোঁজ কলকাতার বেলেঘাটার যুবক গণেশ দাস খুন হয়েছেন বলে তদন্তে পুলিশ জেনেছে। তাঁর দেহের খোঁজে বুধবারও ডুবুরি নামিয়ে হাওড়ার জয়পুরের খালনায় গাইঘাটা খালে তল্লাশি চালাল পুলিশ। তল্লাশিতে উঠে এল বস্তায় ভরা হাড়গোড়। এক পুলিশকর্তা জানান, ওই বস্তায় পাথরও ছিল। হাড়গোড় ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়ার রাজাপুরের বড়গ্রামের বাসিন্দা, ধৃত নবনীতা দাসের শ্বশুরবাড়ি বেলেঘাটায় গণেশদের বাড়ির কাছেই। সেই সূত্রেই দু’জনের আলাপ। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৮ সালে নবনীতা বাপের বাড়ি চলে আসে। এরপর গণেশের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হয়। ২০২১ সালে তাঁর থেকে নবনীতা তিন লক্ষ এবং পরের বছর নবনীতার মামা, দক্ষিণ খালনার বাসিন্দা সুকল্যাণ মালিক এক লক্ষ টাকা ধার নেয় ১০% সুদে। প্রথমে মামা-ভাগ্নি ঋণ শোধে কিস্তির টাকা দিচ্ছিল। পরে তাঁরা গণেশকে বলে, টাকা শোধ করতে পারবে না। বিনিময়ে তাঁকে জমি দেবে। এ নিয়ে কথা বলতে গত বছরের ২৩ অগস্ট দক্ষিণ খালনায় সুকল্যাণের বাড়িতে যান গণেশ। সেখানে নবনীতাও ছিল। ওই দিন থেকেই গণেশ নিখোঁজ হন।
কয়েক দিন পরে গণেশের ভাই কার্তিক জয়পুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। ৩০ নভেম্বর অপহরণের মামলা রুজু হয়। গত শুক্রবার রাতে নবনীতাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শনিবার সুকল্যাণ এবং তার স্ত্রী মনিকা মালিককে ধরা হয়। তিন জনেই পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। পুলিশের দাবি, গোটা ঘটনা মনিকা জানত।
তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানায়, ২৩ অগস্ট সন্ধ্যায় সুকল্যাণের বাড়িতেই গণেশকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। ওই কাজ করে নবনীতা-সুকল্যাণ। তারপরে দেহ বাড়ির পাশে খড়িবনে ফেলে দেয়। দু’দিন পরে সেখান থেকে দেহ তুলে পাথর বেঁধে বস্তায় ভরে খানিক দূরে নির্জন জায়গায় গাইঘাটা খালে ফেলে দেয়। মঙ্গলবার ধৃতদের ওই খালের সামনে এনে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সে দিন কিছু মেলেনি। বুধবার খালে ডুবুরি নামিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা তল্লাশির পরে বস্তাবন্দি হাড়গোড় মেলে। এ দিনও ধৃত তিন জনকেই খালের ধারে আনা হয়েছিল। হাড়গোড় উদ্ধার হতেই নবনীতা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্তারা জানান, নবনীতা-সুকল্যাণের দেখানো জায়গা থেকেই ওই হাড়গোড় মেলে। গণেশের পরিবারের এক জনের দেহের নমুনা সংগ্রহ করে তার সঙ্গে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়ের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। আপাতত অপহরণের মামলার প্রেক্ষিতেই তদন্ত চলছে। রিপোর্ট এলে প্রয়োজনে সেই মতো ধারা যোগ করা হবে।