বাতিল বহু জবকার্ড। — ফাইল চিত্র।
কেন্দ্র টাকা দেওয়া বন্ধ রাখায় চলতি অর্থবর্ষে রাজ্যে একশো দিনের প্রকল্পে কাজ হয়নি। কাজ কবে চালু হবে, তা নিয়ে দিশা দেখাতে পারছে না রাজ্য প্রশাসন। তবে কেন্দ্র নির্দেশ দিয়েছে, ওই প্রকল্পের শ্রমিকদের মজুরি এ বার থেকে দেওয়া হবে শুধুমাত্র তাঁর আধার কার্ডের নম্বরযুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। সেই কাজ করতে গিয়েই হুগলিতে ৭৭ হাজারেরও বেশি জবকার্ড বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন।
প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, প্রকল্পের স্বচ্ছতা দৃঢ় করতেই এই ব্যবস্থা। এই প্রক্রিয়ায় এক ব্যক্তির একাধিক জবকার্ডে নাম তুলে মজুরি তোলা বন্ধ হবে। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, বাতিল হওয়ার জবকার্ডগুলি তিন লক্ষেরও বেশি ভুয়ো শ্রমিকের হাতে ছিল। গত ২০ ডিসেম্বরে পাঠানো কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় বলা হয়, শ্রমিকদের ১০০ শতাংশের আধারযুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-সহ জবকার্ড ‘আপডেট’ করতে হবে। এতে শ্রমিকদের নির্দিষ্ট সময়ে (১৫ দিনের মধ্যে) মজুরি পাওয়া নিশ্চিত হবে। কাজটি সম্পূর্ণ করার নির্দেশ ছিল ১৫ জানুয়ারির মধ্যে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষ হতে চলা এই অর্থবর্ষে হুগলির ২০৭টি পঞ্চায়েত এলাকায় মোট জবকার্ড ছিল ৮ লক্ষ ৪০ হাজার ৫২টি। অনেক শ্রমিকেরই একাধিক ব্যাঙ্ক রয়েছে। তাঁদের যে কোনও একটি ব্যাঙ্কে আধার সংযোগ নিশ্চিত করতে গিয়ে মোট ৭৭ হাজার ৫৬২টি জবকার্ড বাতিল হয়েছে। ওই জবকার্ডের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক বাতিল হয়েছেন ৩ লক্ষ ৩ হাজার ৭৫৮ জন।
এত দিন শুধুমাত্র প্রতি অর্থবর্ষ শুরুর আগে জেলায় নিষ্ক্রিয় জবকার্ডগুলিকেই বাতিল করা হত। অনেক ক্ষেত্রে, যে সব শ্রমিক জানাতেন, তাঁরা প্রকল্পের কাজ করবেন না, তাঁদের জবকার্ডও বাতিল করা হত। যেমন, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে জবকার্ড বাতিল হয়েছে ১ হাজার ৭৬৪টি। ওই কার্ডগুলির অধীন শ্রমিক ছিলেন ১২ হাজার ৮৭১ জন।
জবকার্ডকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির বহু অভিযোগ শোনা গিয়েছে আগে। একাধিক বিডিও এবং পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়কদের অনেকে জানিয়েছেন, কোনও শ্রমিক তাঁর নিজের বুথ এলাকায় কাজের জন্য একটি ব্যাঙ্কে আধার নম্বর সংযুক্ত করে আরও দু’টি ব্যাঙ্ক থেকে অন্য বুথে ভুয়ো কাজের খাতে মজুরি তুলেছেন, এমন নজির দেখা গিয়েছে। আবার পরিবারপিছু একটি জবকার্ড থাকার কথা থাকলেও একই পরিবারের দু’তিন জন নিজেদের পৃথক দেখিয়ে জবকার্ড বানিয়েছেন এবং ভুয়ো কাজ দেখিয়ে মজুরি তুলেছেন, সেই উদাহরণও আছে।
নতুন ব্যবস্থায় জবকার্ড নিয়ে রোখা যাবে বলেই প্রশাসনেরকর্তাদের দাবি।