জিটি রোডে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ বন্ধ সমর্থকদের। চুঁচুড়ায় (বাঁ দিকে)। উলুবেড়িয়ায় বন্ধ সমর্থকদের সরাচ্ছে পুলিশ। ছবি: তাপস ঘোষ ও সুব্রত জানা
কেন্দ্রীয় কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে সোমবার সংযুক্ত কিসান মোর্চার ডাকা বন্ধে হুগলিতে দফায় দফায় রেল ও সড়ক অবরোধ হল। ফলে, পুজোর মুখে ব্যবসা-বাণিজ্যে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। জনজীবনের স্বাভাবিক গতিও ব্যাহত হয়েছে।
বিধানসভা ভোটে আসনশূন্য হওয়ার পরে এ দিন বন্ধের সমর্থনে নতুন উদ্যমে রাস্তায় নামেন সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের। সর্বত্রই লাল ঝান্ডার মিছিল দেখা গিয়েছে। বামেদের দাবি, ধর্মঘট সফল।
সকাল ৮টা নাগাদ পান্ডুয়া স্টেশনে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেনের নেতৃত্বে রেল অবরোধ করে সিপিএম। ঘণ্টা খানেক অবরোধের জেরে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। হুগলি ও চুঁচুড়া স্টেশনের মাঝে এবং হাওড়া-আরামবাগ শাখার তালপুরেও অবরোধ হয়। ধনেখালি স্টেশনে বেলা সওয়া ১২টা থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অবরোধ করে সিপিআই (এমএল) লিবারেশন।
বিভিন্ন রুটের বাস চলেনি। সকালে শ্রীরামপুরগামী ৩১ নম্বর রুটের বাস জাঙ্গিপাড়া থেকে ছাড়ার সময় বন্ধ সমর্থকেরা আটকে দেন। তার জেরে ওই রুটে বাস চলেনি। একই কারণে চুঁচুড়া বাস স্ট্যান্ড
থেকে বাস রাস্তায় নামেনি। যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। চুঁচুড়াগামী ১৭ নম্বর রুটের একটি বাস মাঝরাস্তা থেকে হরিপালে ফিরে যায়। বাঁকুড়া-চুঁচুড়া রুটের একটি বাসকে মাঝপথ থেকে বাঁকুড়ায় ফিরতে হয়। বাস না চলায় সুযোগ বুঝে ছোট গাড়ি বেশি ভাড়া হেঁকেছে। ধনেখালির বাসিন্দা তপন সাধুখাঁ চুঁচুড়া আদালতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ফেরার সময় বেশি টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করতে হল।’’
উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, ভদ্রেশ্বর, চন্দননগর, চুঁচুড়া, পান্ডুয়া প্রভৃতি জায়গায় দফায় দফায় জিটি রোড অবরোধ করে বামেরা। চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। পান্ডুয়ার কালনা
মোড়ে সকাল ১০টা থেকে ঘণ্টাখানেক অবরোধের জেরে ভিন্ রাজ্য থেকে আসা ট্রাক আটকে পড়ে। পান্ডুয়ায় সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, দিল্লি রোড, অসম লিঙ্ক রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কেও বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ হয়। ডানকুনিতে সিএমএম এবং কংগ্রেস মিলিত ভাবে দিল্লি রোড অবরোধ করে। ধনেখালিতে ফিডার রোডে অবরোধ এবং অবস্থান করে সিপিআই (এমএল) লিবারেশন। বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করেছে এসইউসি। শিল্পাঞ্চলে মিশ্র প্রভাব পড়েছে। জুটমিলগুলিতে কাজ হলেও কিছু ছোট শিল্পের ক্ষেত্রে সাড়া মিলেছে বলে ধর্মঘটীদের দাবি। কল-কারখানার সামনে পুলিশের নজরদারি ছিল। অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি।
আরামবাগ, পুরশুড়া, খানাকুল, গোঘাটের বিভিন্ন জায়গাতেও সিপিএম অবরোধ করে। ধর্মঘটীদের দাবি, দোকানপাট খোলা থাকলেও ব্যবসায়ীরা বন্ধকে সমর্থন করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতি বেহাল। তায় দুর্যোগে ব্যবসা মার খাচ্ছে। সেই কারণে দোকান খুলেছেন।
জেলা সিপিএম সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘অল্প দিনের প্রস্তুতিতে ধর্মঘট। তা-ও পুজোর মুখে। প্রচারের সময় বিশেষ মেলেনি। তাতেও এতটা সাড়া মিলবে, ভাবতে পারিনি। কৃষকরা ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন।’’ লিবারেশন নেতা সজল অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রের কৃষি আইন কতটা সর্বনাশা, মানুষ বুঝেছেন। তাই সর্বস্তরের মানুষ বন্ধ সমর্থন করেছেন।’’
গ্রামীণ হাওড়ায় বন্ধের প্রভাব পড়েনি। উলুবেড়িয়ার গরুহাটায় ধর্মঘটী বাম সমর্থকেরা গাড়ির চাকার হাওয়া খোলার চেষ্টা করেন। পুলিশ বাধা দেয়। উলুবেড়িয়ার নরেন্দ্র মোড়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন বন্ধ সমর্থকরা। পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। পরে তাঁরা নিমদিঘি মোড়ে অবরোধ করেন।