উত্তরপাড়ায় মশা মারতে ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
ডেঙ্গিতে ফের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল উত্তরপাড়ায়। ডেঙ্গি দাপাচ্ছে এই শহরে। মৃতের নাম সন্দীপকুমার মুখোপাধ্যায় (৩৭)। বাড়ি পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের শিবনারায়ণ স্ট্রিটে। সম্প্রতি এই ওয়ার্ডেরই এক যুবকের ডেঙ্গিতে এবং এক কিশোরের টাইফয়েডে মৃত্যু হয়। শ্রীরামপুরেও মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ বেড়েছে। সম্প্রতি এখানে ডেঙ্গিতে এক মহিলা মারা যান। এই দুই শহর নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন।
সন্দীপ বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার থেকে তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। তাঁকে উত্তরপাড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার পুরসভার মহামায়া হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। আইসিসিইউতে রাখা হয়। শুক্রবার দুপুরে তিনি মারা যান। মৃতের বাবা উজ্জ্বলকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ আগে ছেলে বাড়িতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। দরজা ভেঙে উদ্ধার করে নার্সিংহোমে পাঠাই। কিন্তু, জ্ঞান ফিরছিল না। এ দিকে, নার্সিংহোমের বিল বাড়ছিল। রক্ত পরীক্ষায় জানতে পারি, ডেঙ্গি হয়েছে।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভুঁইঞা বলেন, ‘‘মৃতের শরীরে অন্য উপসর্গও ছিল বলে জেনেছি। তবে আরও খোঁজ নিয়ে তবেই নিশ্চিত ভাবে বলতে পারব।’’
ডেঙ্গি প্রতিরোধে যথাযথব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে শুক্রবার বিজেপি পুরসভায় স্মারকলিপি দেয়। বিজেপি নেতা প্রণয় রায়ের দাবি, ‘‘পুর-কর্তৃপক্ষ চাইলে আমরা এই কাজে সাধ্য মতো তাঁদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত।’’ পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘সুডা (রাজ্য নগর উন্নয়ন সংস্থা) ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা অনুয়ায়ী আমরা ডেঙ্গি মোকাবিলার চেষ্টা করছি। মশার লার্ভা মারতে তেল ছেটানো হচ্ছে। এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করতে নানা প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।’’
কয়েক বছর আগে শ্রীরামপুরে ডেঙ্গি কার্যত ছেয়ে গিয়েছিল। তার পর থেকেও প্রায় প্রতিবারেই এই শহরকে ভুগিয়েছে ডেঙ্গি। এ বারেও একই ছবি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২২ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি ছড়িয়েছে সব থেকে বেশি। মশা জন্মানোর জায়গা হিসেবে এলাকার একটি নির্মীয়মাণ বহুতল নিয়ে অভিযোগ পেয়ে শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক সম্রাট চক্রবর্তী পুরসভার জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নিয়েসেখানে যায়।
প্রশাসনের আধিকারিকদের দাবি, সেখানে যে জলাধার রয়েছে, মশা না জন্মানোর জন্য তাঁরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। ওই চৌহদ্দিতে পরিত্যক্ত একটি জুতোর ভিতরে জমা জলে মশার লার্ভা মিলেছে। একই ভাবে লোকালয়ে ফেলে দেওয়া বিভিন্ন জিনিসে, বাড়ির টবে মশার লার্ভা মিলেছে। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা মানুষকে সচেতন করছি। উত্তরপাড়ায় এ নিয়ে মিছিল হয়েছে। পুর-স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি জ্বরের খোঁজ নিচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’’ ওই আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘মশা জন্মানোর জায়গা খুঁজে দেখতে পুরকর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। কিন্তু, সকলে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছেন না। সে ক্ষেত্রে কার্যত জোর করে ঢুকতে হচ্ছে। উত্তরপাড়ার ক্ষেত্রে এমনঘটনা ঘটেছে।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, রিষড়া শহরেও ডেঙ্গি মাথাচাড়া দিচ্ছিল। প্রশাসন এবং পুরসভার তরফে ডেঙ্গি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সংক্রমণের হার এই শহরে এখন নিম্নমুখী। তবে, চিন্তা বাড়াচ্ছে শ্রীরামপুর এবং উত্তরপাড়া।