শুভেন্দু অধিকারী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
অনেক দিন ধরেই শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘লটারি দুর্নীতি’র অভিযোগ তুলে আসছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নাম না করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওই লটারি সংস্থার যোগসাজশের অভিযোগও তুলেছেন তিনি। এ বার তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচির টাকাও নাকি যোগাচ্ছে ডিয়ার লটারি! শুভেন্দুকে পাল্টা কটাক্ষ করেছে তৃণমূলও। দলের রাজ্যসভা সাংসদ তথা মুখপাত্র শান্তনু সেন জানিয়েছেন, বিরোধী দলনেতাকে এ সব অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে। না হলে যে ছেড়ে কথা বলা হবে না, তা-ও জানিয়েছেন শান্তনু।
বুধবার হুগলির উত্তরপাড়ায় একটি জনসভায় শুভেন্দু দাবি করেন, তৃণমূলের নয়া কর্মসূচির খরচ আসছে ‘ডিয়ার লটারি’ থেকে। সেই সংক্রান্ত কাগজও তাঁর কাছে আছে। ডিয়ার লটারি প্রতি মাসে তৃণমূলকে ২৫-৩০ কোটি টাকা দিচ্ছে বলে দাবি করেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর কথায়, ‘‘চলছে নবজোয়ার, যাচ্ছি আমি তিহাড়! টাকা কে দিচ্ছেন জানেন? ডিয়ার লটারি। আয়কর দফতরকে জানিয়েছে, প্রতি মাসে তারা ২৫-৩০ কোটি টাকা এসবিআইয়ের মাধ্যমে তৃণমূলের ইলেক্টোরালে দিচ্ছে। আমি ডকুমেন্ট পেয়ে গিয়েছি।’’ শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, ‘‘বাংলার কোটি কোটি মানুষকে বঞ্চিত করে এই যে ব্যবসা, এটা আমরা বন্ধ করব। সাবধান ডিয়ার লটারি, সাবধান পশ্চিমবঙ্গের জনগণ, সাবধান তৃণমূল।’’
এর প্রেক্ষিতে শুভেন্দুকে পাল্টা আক্রমণ করেছে তৃণমূল। শান্তনু বলেন, ‘‘উনি যে অভিযোগ করছেন, সেই অভিযোগের জবাব ও প্রমাণ ওঁকেই দিতে হবে। ছাড়ব না। যাঁকে টিভির পর্দায় হাত পেতে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁর মুখে এ সব কথা মানায় না। এই ধরনের কথা যিনি বলছেন, তাঁর উপর রাজ্যের মানুষের কোনও রকমের আস্থা নেই।’’
সম্প্রতি বঙ্গ-রাজনীতিতে নতুন মাত্রা এনেছে লটারি-প্রসঙ্গ। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসকদলের কেউ কেউ কালো টাকা সাদা করতে লটারিতে পুরস্কার পাচ্ছেন। এই দাবি আরও জল-বাতাস পেয়েছে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নাম জড়িয়ে যাওয়ার পর। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি ও সিবিআইয়ের দাবি, চলতি বছরে লটারির পুরস্কারের অর্থমূল্য বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা অনুব্রত এবং তাঁর কন্যা সুকন্যা মণ্ডলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। ওই দু’জনের দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পুরস্কার বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা ঢুকেছে দাবি করেছে তারা। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবা ও মেয়ের বার বার লটারি জেতার পিছনে কি বরাতজোর, না অন্য কোনও কারণ রয়েছে— তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গরু পাচার চক্রের অন্যতম অভিযুক্ত এনামূল হকও ২০১৭ সালে এক কোটির পুরস্কার জিতেছিলেন বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। জোড়াসাঁকোর তৃণমূল বিধায়ক বিবেক গুপ্তের স্ত্রীও কিছু দিন আগে লটারি থেকে এক কোটি টাকার প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রথমে অভিযোগ থাকলেও পরে স্ত্রী রুচিকা গুপ্ত যে ডিয়ার লটারির প্রথম পুরস্কার জিতেছেন, তা স্বীকার করেন বিবেক। সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘লটারির টিকিট কাটা অন্যায়, না কি জেতা অন্যায়?’’
ডিয়ার লটারি নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে প্রথম থেকে সবচেয়ে বেশি সরব শুভেন্দুই। রুচিকার পুরস্কার প্রাপ্তির পর তিনি টুইটে লিখেছিলেন, ‘‘ডিয়ার (ভাইপো) লটারি আর তৃণমূলের মধ্য যে সম্পর্ক রয়েছে, তা আমি অনেক দিন ধরেই বলে আসছি। এটা টাকা পাচারের সহজ উপায়। সাধারণ মানুষ টিকিট কেনেন আর তৃণমূল নেতারা বাম্পার পুরস্কার জেতেন। প্রথম অনুব্রত মণ্ডল জিতলেন। এ বার তৃণমূল বিধায়ক বিবেক গুপ্তের স্ত্রী এক কোটি টাকা পেলেন।’’