মুণ্ডেশ্বরী থেকে এ ভাবেই পলি তোলা হয়েছিল। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
সাম্প্রতিক বন্যায় আরামবাগ মহকুমার বেশ কিছু জায়গায় দ্বারকেশ্বর এবং রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙেছে। কিন্তু অক্ষত থেকে গিয়েছে মুণ্ডেশ্বরী এবং দামোদরের বাঁধ। বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকায় মুণ্ডেশ্বরীর (দামোদরের শাখা নদী) পলি তোলার কাজ বেশির ভাগ হয়ে যাওয়ায় বাঁধের ক্ষতি হয়নি বলে দাবি সেচ দফতরের।
আগে বহুবার মুণ্ডেশ্বরীর বাঁধ ভেঙে আরামবাগের মলয়পুর, বাছানরি, বালিয়া, কেশবপুর, অরুণবেড়া, মাড়কুন্ডা ইত্যাদি গ্রাম প্লাবতি হয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পলকা নদীবাঁধ ভেঙে বা ক্ষয়ে গিয়ে গ্রামে জল ঢুকত। এ বার পলি সংস্কার হওয়ায় বাঁধ ভাঙেনি। জল দ্রুত নেমে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতিও বিশেষ হয়নি।
সেচ দফতর জানিয়েছে, অতীতে ডিভিসি-র ছাড়া ৭০-৮০ হাজার কিউসেক জলেই মুণ্ডেশ্বরী নদীর বাঁধ ভেঙে বা পাড় উপচে প্লাবিত হতে দেখা গিয়েছে পুরশুড়া, খানাকুলের দু’টি ব্লক এবং আরামবাগ ব্লকের অধিকাংশ এলাকা। এ বার জুলাই মাসের শেষে ডিভিসি থেকে ছাড়া ১ লক্ষ কিউসেকের বেশি জল বইলেও এখানে পলি তোলার কাজ হয়ে যাওয়ায় মুণ্ডেশ্বরীর কোথাও বাঁধ ভাঙেনি। উল্টে অধিকাংশ জল টেনে নিয়ে দামোদরের চাপও কমিয়েছে। ফলে, দামোদরেও বাঁধ ভাঙেনি। মুণ্ডেশ্বরীর ১৪ কিলোমিটার অংশে প্রায় ৩ ফুট গভীর থেকে পলি তোলা হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা জেলা সেচ দফতরের এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার যিশু দত্ত বলেন, “মুণ্ডেশ্বরীর মোট ১৯ কিলোমিটার থেকে পলি তোলা হবে। এর মধ্যে এই জেলার ১৪ কিলোমিটারের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। তাতেই অনেকটা সুফল মিলেছে। বর্ধমানের দিকে বাকি কাজ প্রকল্পের দ্বিতীয় দফায় সংস্কার করা হবে।” ওই সেচকর্তা আরও জানান, দামোদর নদের বাঁ দিকে ৩৯.২০ কিমি বাঁধের আমূল সংস্কারের কাজও ৫০ শতাংশের বেশি হয়ে গিয়েছে। রনের খালের (১৮.৬ কিমি) জেলার অংশ সংস্কারের কাজও শেষ।
বন্যার ঝুঁকি কমাতে এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নতিতেই বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই প্রকল্প। অনুমোদন মিলেছিল ২০১৮ সালের শেষ দিকে। হুগলিতে গত বছরের গোড়ায় কাজ শুরু হয়। হুগলি ছাড়াও ওই প্রকল্পের কাজ হচ্ছে বর্ধমান, হাওড়া, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায়।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলিতে কাজ হচ্ছে মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করেই। পূর্ব বর্ধমানের শেষ প্রান্ত জামালপুর থানার সোনাগোড়িয়া থেকে পুরশুড়া হয়ে জাঙ্গিপাড়ার পশপুর অব্দি ৩৯.২০ কিমি দামোদরের বাঁ দিকে বাঁধের পুরোটা স্টিলের পাত (শিট পাইল) দিয়ে দেওয়াল তৈরির কাজে বরাদ্দ হয় প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। মুণ্ডেশ্বরীর পলি তোলায় বরাদ্দ হয় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।