ওয়াজুল হক নিজস্ব চিত্র।
হাওড়ার নাজিরগঞ্জের লিচুবাগানে তৃণমূল নেতা ওয়াজুল হক খানকে খুন করার পরে আততায়ীরা এক মহিলা-সহ তিন জনের নামে জয়ধ্বনি দিয়েছিল। ওয়াজুলের ছেলে, এলাকার যুব তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত আরিফ আহমেদ খান পুলিশে দায়ের করা এফআইআরে এমনই অভিযোগ করেছেন। আরিফ জানিয়েছেন, তাঁর বাবাকে খুন করার পরে হত্যাকারীরা শিবপুরের এক দুষ্কৃতী পিটিএস রাজা, মালতী রায় এবং রথীন চক্রবর্তী— এই তিন জনের নামে জয়ধ্বনি দেয়। এফআইআরে অবশ্য পিটিএস রাজা, মালতী রায়-সহ আরও কয়েক জনের নাম উল্লেখ করলেও রথীন চক্রবর্তীর নাম করেননি তিনি। মঙ্গলবার রাতে আরিফের করা ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কে এই মালতী রায়? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মৌড়িগ্রামের ইন্ডিয়ান অয়েল ডিপোর ‘ট্যাঙ্কার্স ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেত্রী মালতী। ওয়াজুলের ছোট ভাই গুড্ডু খান যখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তখন ওই সংগঠনের নেতৃত্ব তাঁর হাত থেকে চলে যায়। নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন মালতী। পরে বিজেপির নেতৃত্বে গুড্ডু ফের সংগঠনের অফিস দখল করতে এলে দু’পক্ষে গোলমাল হয়। শেষ পর্যন্ত তৃণমূল অফিসটি দখল করে। তখন থেকে মালতীর নেতৃত্বেই ওই সংগঠন চলছে।
বুধবার আরিফ অভিযোগ করেন, ‘‘মালতী মৌড়িগ্রাম ট্যাঙ্কার্স ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছিল তোলাবাজি। বাবা বহু বার তার প্রতিবাদ করেছিলেন। সে জন্য পিটিএস রাজা এবং মালতী তাঁকে একাধিক বার খুনের হুমকি দিয়েছিল। আমরা নিশ্চিত, ওরা দু’জনে পরিকল্পনা করে ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে বাবাকে খুন করেছে।’’
অভিযোগ অস্বীকার করে মালতী বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ওয়াজুলের খারাপ সম্পর্ক ছিল না। ইন্ডিয়ান অয়েলের ট্যাঙ্কার্স অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে উনি কোনও দিন মাথা ঘামাননি। ওঁকে খুনের পিছনে রয়েছে ওঁর পরিবারেরই চক্রান্ত। পুর নির্বাচনে তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করার জন্য বিজেপি এই খুন করে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছে। আমরা চাই, প্রশাসন তদন্ত করে এই ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করুক।’’
হাওড়ার বিজেপি নেতা তথা দলের রাজ্য কমিটির সদস্য উমেশ রাই বলেন, ‘‘ওয়াজুলের পরিবারের তোলা অভিযোগ থেকেই স্পষ্ট, তৃণমূলের নেতারাই এই ঘটনায় জড়িত। বিজেপির নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’ তৃণমূলের হাওড়া জেলা সদর সভাপতি কল্যাণ ঘোষ বলেন, ‘‘প্রশাসন তাদের কাজ করবে। খুনে যারাই জড়িত থাকুক, রাজনৈতিক রং না দেখে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিক।’’ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পাঁচ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও মূল ষড়যন্ত্রকারী এখনও অধরা। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। খুনের পিছনে যারা আছে, শীঘ্রই তাদের গ্রেফতার করা হবে।’’ ধৃত পাঁচ জনকে এ দিন হাওড়া আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।