প্রতীকী ছবি।
বিএড পড়ার হিড়িক লেগেছে হাওড়ায়!
এই জেলায় অন্তত ১৫টি বেসরকারি বিএড কলেজ আছে। সরকারি বিএড কলেজ দু’টি। গত কয়েক বছরে বেশিরভাগ বেসরকারি কলেজই সে ভাবে পড়ুয়া পায়নি। অথচ, এ বার ছবিটা বদলে গিয়েছে। প্রতিটি কলেজেরই সব আসন (১০০টি করে) ভরে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার ছিল ভর্তির আবেদন করার শেষ দিন। আসন পূরণ হয়ে যাওয়ায় কলেজগুলির কর্তারা খুশি হলেও অনেক পড়ুয়াকে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। সরকারি দু’টিবিএড কলেজে (হাওড়া বিজয়কৃষ্ণ গার্লস কলেজ ও উলুবেড়িয়া কলেজ) ভর্তি হওয়ার চাহিদা ছিল আকাশছোঁয়া। বেশিরভাগ আবেদনকারীই সুযোগ পাননি।
হল কী!
কলকাতা হাই কোর্টই আশার আলো দেখাচ্ছে, মত পড়ুয়া এবং বিএড কলেজের শিক্ষকদের একটা বড় অংশের। তাঁরা জানান, গত কয়েক বছর স্কুল সার্ভিস কমিশনে (এসএসসি) শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। সেই কারণে পড়ুয়াদের মধ্যে বিএড পড়ার আগ্রহ কমে গিয়েছিল। শিক্ষক নিয়োগ যেখানে হচ্ছে না, সেখানে আর বিএড পড়ে কী হবে, এমনম মনোভাব দেখা দিয়েছিল। সেই কারণে গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে অনেক পড়ুয়াই আর বেসরকারি বিএড কলেজে ভর্তি হতে চাননি। ফি কমিয়ে দিয়েও সে ভাবে পড়ুয়া টানতে পারেনি কলেজগুলি। তার জেরে অনেক কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রমও হয়েছিল।
কিন্তু এ বার এসএসসি দুর্নীতি নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সিবিআই তদন্ত চলছে। আদালতের নির্দেশে শিক্ষা দফতর বড় ধাক্কা খেয়েছে। এরপরে আদালতের নির্দেশেই রাজ্য সরকার ফের বিপুল সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগে বাধ্য হবে এবং তাতে কোনও দুর্নীতি হবে না বলে মনে করছেন পড়ুয়া এবং কলেজ শিক্ষকদের ওই অংশটি।
পাঁচলার গঙ্গাধরপুর শিক্ষণ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা সন্তোষ দাস বলেন, ‘‘আমাদের কলেজে বিএড-এর সুনাম আছে। তাই আমাদের তেমন পড়ুয়ার অভাব হয় না। কিন্তু এ বারে ভর্তির চাদিদা গত কয়েক বছরে তুলনায় নজিরবিহীন। আদালতের সাম্প্রতিক কার্যকলাপে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছে। এই হিড়িক তারই প্রতিফলন।’’
প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে রসপুরের একটি বেসরকারি বিএড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা তপন মণ্ডলের মুখেও। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর আমাদের সব আসনে পড়ুয়া টানতে হিমশিম খেতে হয়। এ বারে চাহিদা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছি। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে। সেটাই পরিস্থিতির বদল ঘটিয়েছে।’’
তবে, বিভিন্ন বেসরকারি কলেজের সঙ্গে কথা বলে আর একটি কারণের কথাও জানা গিয়েছে। সেটা হল, নতুন নিয়মে বিএড ডিগ্রিধারীরা প্রাথমিকে নিয়োগের জন্য যে টেট পরীক্ষা হবে সেই পরীক্ষাতেও বসতে পারবেন। সেই কারণেই বিএড পড়ার জন্য আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
একইসঙ্গে অবশ্য ওই কলেজ শিক্ষকদের একটা বড় অংশ জানিয়েছেন, এই নিয়ম বছর দুয়েক আগেই চালু হয়। কিন্তু বিএডপড়ার এই হিড়িক এ বছরের মতো দেখা যায়নি।