এই কার্যালয়েরই দ্বারোদঘাটন হল। নিজস্ব চিত্র।
কালের নিয়মে জীর্ণ হয়ে পড়েছিল বাড়িটি। তবে নতুন করে মাথা তুলেছে। মঙ্গলবার হুগলির বলাগড় ব্লকের জিরাটে এই কার্যালয়ের দ্বারোদ্ঘাটন করলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে দলীয় কর্মীদের মধ্যে বাড়তি উদ্যম জোগাবে এই পদক্ষেপ, আশা স্থানীয় সিপিএম নেতাদের। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে হুগলিতে সিপিএমের বহু কার্যালয় দখলের অভিযোগ ওঠে। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের পরে জিরাটেই সিপিএমের নাবিক সমিতির কার্যালয় দখলের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পরে তৃণমূলেরই কয়েক জন নেতার ‘সৌজন্যে’ সেটি সিপিএমের হাতে ফেরে।
বলাগড় ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের একটিও এখন সিপিএমের হাতে নেই। পঞ্চায়েত সমিতিও তৃণমূলের দখলে। জেলা পরিষদেও সিপিএমের আসন শূন্য। এই পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা খরচে তাদের নয়া কার্যালয় স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে চর্চার বিষয় হয়েছে। সংগঠন চাঙ্গা হচ্ছে কি না, চলছে জল্পনা। সিপিএমনেতৃত্ব জানালেন, বাম আমলে তৈরি এই ভবন ছিল জিরাট লোকাল কমিটির কার্যালয়। জীর্ণ হওয়ায় ২০১৯ সালে একতলা ওই ভবনভেঙে ফেলা হয়। দলের সদস্যদের অনুদান, মানুষের থেকে অর্থ সংগ্রহ করে নতুন দোতলা ভবন তৈরি হয়েছে। এখন এটি বলাগড় ২ এরিয়া কমিটির কার্যালয়।
তৃণমূলের বলাগড় ব্লক সহ-সভাপতি তপন দাস বলেন, ‘‘চাঁদা তুলে কর্মসূচি সিপিএমের পুরনো রীতি। তবে এ ক্ষেত্রে মানুষ সেটা দেখেননি।’’ তাঁর দাবি, গত পাঁচবছরে সিপিএমের তেমন শক্তিবৃদ্ধি এখানে হয়নি। ফলে ভবনের জন্যখরচ কোথা থেকে এল, সে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অতনু ঘোষ পাল্টা বলেন, ‘‘২০১৯ সাল থেকে বহু মানুষের কাছে গিয়েছি। তৃণমূল শান্তনু-কুন্তলের (নিয়োগ কাণ্ডে ধৃত, বর্তমানে বহিষ্কৃত দুই তৃণমূল যুব নেতা) দল। কোনও কিছু করতে ওদের অনুদান লাগে না। ওদের জবাব না দেওয়াই ভাল।’’ অতনুর কথায়, ‘‘এই কার্যালয়ের উঠোন গরিব মানুষ ছোটখাট নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করেন। করোনা-পর্বে ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নির্মীয়মাণ ভবনটি খুলে দেওয়া হয়। মানুষ তা ভোলেননি।’’
জিরাট কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সভায় এ দিন সেলিমের অভিযোগ, সর্বস্তরে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। জীবনকৃষ্ণ সাহার উদাহরণ টেনে বলেন, ‘‘বিধায়ক ভয়ে পাঁচিল টপকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ছেন। জঙ্গলে মোবাইল ছুড়ে ফেলছেন। মানে, মোবাইলে কিছু আছে। সিবিআই, ইডি কী করবে জানি না, কিন্তু মানুষ বুঝে গিয়েছেন।’’ তাঁর মতে, নিয়োগের তদন্ত রাজ্যপুলিশই করতে পারত। কিন্তু তারা চোর পাহারা দিচ্ছে।’’
তৃণমূলের হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইনের পাল্টা জবাব, ‘‘ওরা ৩৪ বছর ধরে যা জমিয়েছিল, এখন খরচ করছে দলীয় কার্যালয়ে। ওরা তোলাবাজি-সিন্ডিকেটের পথপ্রদর্শক। ওদের মুখে কোনও কথা মানায় না।’’