আইনের গেরোয় শিশুটিকে ফিরিয়ে দিতে হল ‘নতুন মা’কে। —ফাইল চিত্র।
শিশুর ভরণপোষণ করতে পারবেন না। তাই আট দিনের সন্তানকে কোর্ট পেপারে সই করে ‘দান’ করে দেন মা। শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনে এই খবর প্রকাশ হওয়ার পরই নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। জানানো হল, ওই দত্তক বেআইনি। শিশুটির জন্মদাত্রী মা এবং যে মহিলা শিশুটিকে দত্তক নিয়েছেন বলে দাবি করেন, তাঁদের দু’জনকেই থানায় ডাকে পুলিশ। রবিবার বেশ কিছু ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর শিশুটিকে একটি হোমে পাঠানো হয়। তার মাকেও একটি হোমে পাঠানো হয়েছে বলে জানাল পুলিশ।
গত ২২ সেপ্টেম্বর চুঁচুড়া জেলা হাসপাতালে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন এক মহিলা। পেশায় ইটভাটার শ্রমিক তিনি। সুগন্ধা অঞ্চলে একটি ইটভাটায় কাজ করা ওই মহিলা গত ২৭ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই দুধের শিশুকে ‘দান’ করে দেন। শিশুটিকে নেন চুঁচুড়ার চ্যাটার্জিবাগান এলাকার বাসিন্দা যাদব এবং বুলু মণ্ডল নামে এক দম্পতি। নিঃসন্তান ওই দম্পতি দাবি করেন, শিশুসন্তানকে নেওয়ার বিনিময়ে কোনও আর্থিক লেনদেন হয়নি। নিজের ইচ্ছায় শিশুটিকে দান করেছেন তার মা। একটি ১০০ টাকার কোর্ট পেপার পাওয়া যায়। তাতে লেখা রয়েছে, ‘‘শিশু মানুষ করার মতো আর্থিক সামর্থ নেই। শিশুর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে অপারগ। তাই লিখিত ভাবে সন্তানকে হস্তান্তর করছি।’’ এই খবরটি শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার পরই চ্যাটার্জি বাগান এলাকায় মণ্ডলদের বাড়িতে হাজির হন জেলা শিশু সুরক্ষা দফতরের আধিকারিক এবং চুঁচুড়া থানার পুলিশ। শিশু-সহ মণ্ডল দম্পতিকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। অন্য দিকে, সুগন্ধার ওই ইটভাটা থেকে শিশুটির মাকেও এনে তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হাতে তুলে দেয় শিশুটিকে। সেখান থেকে কোন্নগরে একটি হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয় শিশু ও তার মাকে। প্রশাসন সূত্রে খবর, শিশুটিকে যে ভাবে দত্তক দেওয়া হয়েছিল তা সম্পূর্ণ বেআইনি। বাচ্চাটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা পদক্ষেপ করেছে।
শিশুটির মা আদতে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। তবে তাঁর স্বামীর খোঁজ নেই। প্রাথমিক ভাবে তদন্তের পর পুলিশ মনে করছে, একা শিশুটির দায়িত্ব নিতে পারবেন না বলেই ওই মহিলা এ রকম পদক্ষেপ করেছেন। অন্য দিকে, যাঁরা শিশুটিকে দত্তক নিয়েছিলেন, তাঁরা এ নিয়ে যে সব নিয়ম আছে, সেগুলো সম্পর্কে অবহিত নন। তাই তাঁদের বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে তদন্তের প্রয়োজনে ওই দম্পতিকে আবার ডাকা হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এ নিয়ে চন্দননগর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ঈশানী পাল বলেন, ‘‘শিশুটিকে উদ্ধারে সাহায্য করার জন্য চাইল্ড প্রোটেকশন থেকে চুঁচুড়া থানাকে বলা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী শিশু ও তার মাকে উদ্ধার করা হয়।’’