হুগলি জেলা পরিষদ ভবন। চুঁচুড়ায়। নিজস্ব চিত্র tapasabp@gmail.com
সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি নির্বাচিত হন গত ৭ সেপ্টেম্বর। তার এক সপ্তাহের মাথায় গঠিত হয়েছে স্থায়ী সমিতি। অথচ, তার পরে তিন মাস হতে চলল, হুগলি জেলা পরিষদে অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ পদে কাউকে বসানো হল না। শাসকদলের অঙ্গুলিহেলনে প্রশাসন ইচ্ছাকৃত ভাবে বিষয়টি আটকে রেখেছে বলে বিজেপি অভিযোগ তুলছে। প্রতিবাদে পথে নামা হবে, আদালতে যাওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে গেরুয়া শিবির। প্রশাসন বা তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
নিয়ম অনুযায়ী, অধ্যক্ষের পদ বিরোধীদের জন্য নির্দিষ্ট। হুগলি জেলা পরিষদে আসন ৫৩টি। তার মধ্যে তৃণমূলের দখলে ৫১টি। বিজেপির হাতে ২টি। বিজেপি সদস্য সুশান্ত ঘোষ বা কালীপদ অধিকারীর মধ্যে কারও ওই পদে বসার কথা। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, অধ্যক্ষ পদের জন্য তাঁদের তরফে ইতিমধ্যেই সুশান্তের (তিনি খানাকুলের বিধায়কও) নাম পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে প্রশাসনের উদ্যোগ নেই।
বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষের অভিযোগ, তৃণমূলের কথামতো প্রশাসন অধ্যক্ষের পদ নিয়ে গড়িমসি চলছে। বেশ কিছু দিন আগেই বিজেপির তরফে অধ্যক্ষ হিসাবে সুশান্তের নাম পাঠানো হলেও ইচ্ছাকৃত ভাবে চেয়ারটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘বিধানসভায় শীতকালীন অধিবেশন শেষ হলেই এ নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামব। প্রয়োজনে আদালতে যাব।’’ সুশান্তের অভিযোগ, ‘‘জেলা পরিষদের দুর্নীতি ঢাকতেই তৃণমূল নেতৃত্বের চাপে জেলা প্রশাসন আমাকে পদে বসাচ্ছে না। এ নিয়ে শীঘ্রই প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেব।’’ কালীপদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘অধ্যক্ষ থাকলে কাজ করতে সুবিধা হত। কবে বসানো হবে, তা তৃণমূলই জানে।’’
অধ্যক্ষ নিয়োগে তৃণমূলের হস্তক্ষেপের কথা মানেননি সভাধিপতি রঞ্জন ধারা। বিষয়টি তিনি প্রশাসনের দিকে ঠেলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাছে অধ্যক্ষের নাম এসে পৌঁছয়নি। বিষয়টি প্রশাশনিক। প্রশাসনের কর্তারাই ভাল বলতে পারবেন।’’ উপাধ্যক্ষ পদ নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সময় মতোই বসানো হবে।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অদিতি চৌধরী বলেন, ‘‘প্রক্রিয়া চলছে। কত দূর এগিয়েছে, নথি দেখে বলতে হবে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, সংসদীয় গণতন্ত্রে জেলা পরিষদে অধ্যক্ষের পদটি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকটা বিধানসভার বিরোধী দলনেতার মতো। জেলা পরিষদের অর্থ কমিটি, টেন্ডার কমিটি-সহ সব ধরনের পরিষদীয় কমিটিতেই অধ্যক্ষ থাকার অধিকারী। সরকারি কাজে কোনও অনিয়ম হলে, অধ্যক্ষের মাধ্যমে তা প্রকাশ্যে আসতে পারে।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে হুগলি জেলা পরিষদের আসন ছিল ৫০টি। প্রত্যেকটিতেই জিতেছিল তৃণমূল। বিরোধী না থাকায় অধ্যক্ষের পদে তৃণমূলেরই সমীরণ মিত্রকে বসানো হয়। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সমীরণ
বিজেপিতে যোগ দেন।