আদালতের পথে ধৃত তিন। নিজস্ব চিত্র —নিজস্ব চিত্র।
বছর দু’য়েক আগে চন্দননগরে স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থায় ডাকাতি ও খুনের চেষ্টার দায়ে তিন দুষ্কৃতীকে মঙ্গলবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনাল চুঁচুড়া আদালত। সাজাপ্রাপ্তদের নাম বিট্টু কুমার ওরফে কর্ণ, গুড্ডু কুমার ওরফে ধর্মেন্দ্র এবং বিট্টু কুমার ছোট্টু। তারা বিহারের বৈশালী জেলার সোনপুর শেখপুরার বাসিন্দা। সোমবার তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত।
পুলিশের দাবি, বিহারের একটি গ্যাংয়ের এই সদস্যেরা অপরাধ জগতে পুরনো। ‘শার্প শুটার’ ছোট্টু ব্যারাকপুরে মণীশ শুক্ল খুনেও অভিযুক্ত। আসানসোলে ডাকাতি করে ১৮ লক্ষ টাকা পেয়েছিল সে। কর্ণের বিরুদ্ধে বিহারে এটিএমের টাকার গাড়ি লুট ও খুনের অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার আদালত চত্বর পুলিশে মুড়ে ফেলা হয়। কড়া নিরাপত্তায় তিন জনকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট) শিবশঙ্কর ঘোষের এজলাসে হাজির করা হয়। মামলার বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি বিভাস চট্ট্যোপাধ্যায় জানান, ৩০৭ (খুনের চেষ্টা) এবং ৩৯৪ (পরিকল্পিত ভাবে ডাকাতি) ধারায় তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ বছরের কারাবাসের আদেশ দেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রের খবর, তিন অপরাধীই কলেজে পড়েছে। প্রযুক্তি সম্বন্ধে ওকাকিবহাল। মূলত স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থায় ডাকাতি করত তারা। অনলাইনে সংশ্লিষ্ট সংস্থার গ্রাহক-সংক্রান্ত বিষয় খুঁটিয়ে দেখে আন্দাজ করে নিত, মোটা টাকা বা সোনা পাওয়া যেতে পারে। তারপরেই চলত ‘অপারেশন’।
২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারে জিটি রোডের পাশে ওই সংস্থায় দুই দুষ্কৃতী গ্রাহক সেজে ঢোকে। তাদের সঙ্কেত পেয়ে বাইরে থাকা আরও দু’জন ভিতরে ঢোকে গেটে দাঁড়ানো নিরাপত্তাকর্মীর মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, এক দুষ্কৃতী কর্মীদের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ধরে। এক দুষ্কৃতী টাকা ব্যাগে ভরে। এ সবের মধ্যেই কেউ বিপদঘণ্টি বাজিয়ে দেন। তখন শূন্যে গুলি ছোড়ে ডাকাতেরা। পুলিশ চলে আসায় তারা পালায়।
পালানোর সময়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের গুলির লড়াই হয়। কর্ণ, ধর্মেন্দ্র, ছোট্টুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্য জন অধরা। তদন্তকারীদের দাবি, রীতিমতো ‘রেইকি’ করে মঙ্গলবার ওই বাজার বন্ধের দিনই ডাকাতি করতে এসেছিল দুষ্কৃতীরা। ধৃতদের কাছ থেকে সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র, ৭০ রাউন্ড কার্তুজ, পাঁচটি ম্যাগাজিন, পোর্টেবল জ্যামার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, মোবাইল ফোন এবং দু’টি বাইক উদ্ধার করে পুলিশ। নগদ টাকা, সোনাও উদ্ধার হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথমে মামলাটি চন্দননগর আদালতে হলেও গোয়েন্দা সূত্রে খবর মিলেছিল, অভিযুক্তদের ছাড়িয়ে নিতে ওই আদালত চত্বরে হামলা বা নাশকতার ছক কষা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে মামলা চুঁচুড়া আদালতে সরানো হয়।
এ দিন সাজা ঘোষণার পরে চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অমিতপ্রসাদ জাভালগি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘ডাকাত দলটি বহু জায়গায় এ ধরনের অপরাধ সংগঠিত করেছে। চন্দননগরের ঘটনার পরে আমাদের অফিসাররা দুষ্কৃতীদের ধরেছেন। মামলার তদন্তকারী অফিসার অতনু মাঝি জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। আমরা মানুষকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, এই ধরনের অফিসার আমাদের দফতরে আছে।’’ সিপি জানান, ডিসিপি (চন্দননগর) বিদিতরাজ বুন্দেশের নেতৃত্বে ঘটনার কিনারা করেছে পুলিশ।