চন্দননগরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুজো, কালীপুজোর পর্ব মিটতেই সব নজর এখন চন্দননগরে। কারণ রাজ্যের অল্প যে কয়েকটি জায়গায় জগদ্ধাত্রী পুজো নিয়ে আলাদা উন্মাদনা লক্ষ করা যায়, সেই জায়গাগুলির অন্যতম হল হুগলির গঙ্গাতীরবর্তী এই জনপদ। করোনা অতিমারির কারণে দু’বছর জগদ্ধাত্রী পুজোয় নানা বিধিনিষেধ ছিল। চন্দননগরের বিখ্যাত শোভাযাত্রা, আলোর জাদু থেকে বঞ্চিত ছিলেন মানুষজন। কিন্তু এ বার অতিমারির আতঙ্ক কেটে যাওয়ায় বিপুল জনসমাগম হতে পারে বলে মনে করেছে পুলিশ-প্রশাসন। তাই যানজট সামলাতে এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে একাধিক পদক্ষেপ করতে চলেছে জেলা প্রশাসন।
শুক্রবারই চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে শহরের স্ট্র্যান্ডে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুজোর গাইড ম্যাপ প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, স্থানীয় বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন, জেলাশাসক পি দীপাপ প্রিয়া, পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি প্রমুখ। সাদা পায়রা, বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় জগদ্ধাত্রী পুজোর।
পুলিশ কমিশনার জানান, এ বার পাঁচ লাখ দর্শনার্থীর আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ফেরিঘাট, রেল এবং সড়কপথে বহু দর্শনার্থী আসবেন। তাঁদের নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দের জন্য সব রকম ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। কমিশনারেট ছাড়াও বাইরের জেলা থেকেও পুলিশ আনা হয়েছে। পুজোর চার দিন প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এসপি পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকরাও দায়িত্বে থাকবেন। পার্শ্ববর্তী মফস্সল এবং শহরাঞ্চল থেকে বহু মানুষই সড়কপথে চন্দননগরে ঠাকুর দেখতে আসেন। মূলত জি়টি রোড এবং দিল্লি রোড ধরে চন্দননগরে প্রবেশ করেন দর্শনার্থীরা। দিল্লি রোড দিয়ে চন্দননগরে প্রবেশ করা যায়, এমন ৪৪টি জায়গা চিহ্নিত করে সেগুলিতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হয়েছে। জিটি রোডে দুপুর ২টো থেকে পরের দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে অটো-টোটোর মতো গণপরিবহণও। শুক্রবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই নিয়ম বলবৎ থাকবে।
তবে পুলিশের তরফে এ-ও জানানো হয়েছে যে, দিনের বেলায় কেমন ভিড় হয় তা দেখেই ভিড় নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, শহরের বাইরে থেকে যে সমস্ত গাড়ি আসবে, সে সমস্ত গাড়িগুলিকে নির্দিষ্ট জায়গায় পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবিলায় পুলিশের বিশেষ অপরাধ দমন দল মোতায়েন থাকবে। পাঁচশোরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো থাকবে বড় রাস্তা এবং পুজো মণ্ডপগুলির সামনে। তা ছাড়াও ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালাবে পুলিশ। ২৪ ঘণ্টাই পুলিশের কন্ট্রোলরুম খোলা থাকবে। পুলিশের তরফে দর্শনার্থীদের আশ্বস্ত করে জানানো হয়েছে, তাঁরা যাতে ভাল ভাবে ঠাকুর দেখতে পারেন, তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শহরের প্রবীণ নাগরিক এবং প্রতিবন্ধীদের ঠাকুর দেখানোর জন্য সপ্তমীর দিন বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ কমিশনার।