gas leakage

গ্যাস সিলিন্ডার ‘লিক’ করে অগ্নিকাণ্ডে ধৃত ডেলিভারি-ম্যান

বুধবার সকালে প্রকাশ যখন সিলিন্ডার নিয়ে এসে ওই বাড়িতে সংযোগ করতে যান, তখনই গ্যাস বেরোচ্ছিল। প্রকাশ সে কথা স্বীকারও করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্যামপুর শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২২ ০৯:৪৭
Share:

আদালতের পথে ধৃত প্রকাশ পাত্র। নিজস্ব চিত্র

গ্যাস সিলিন্ডার ‘লিক’ করে ঘরে আগুন ধরে যাওয়ায় বুধবার গুরুতর জখম হয়েছিলেন শ্যামপুরের বাছরি অঞ্চলের আড়গোড়িয়া গ্রামের অশোক মণ্ডল, তাঁর পরিবারের কয়েকজন-সহ মোট ১১ জন। ১০ জনই কলকাতার নানা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেই ঘটনায় ওই রাতেই গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার ‘ডেলিভারি-ম্যান’ প্রকাশ পাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তিনি অবশ্য উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালত থেকে জামিন পান। এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন দমকল এবং গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার আধিকারিকেরা।

Advertisement

বুধবার সকালে প্রকাশ যখন সিলিন্ডার নিয়ে এসে ওই বাড়িতে সংযোগ করতে যান, তখনই গ্যাস বেরোচ্ছিল। প্রকাশ সে কথা স্বীকারও করেছেন। পুলিশ স্বতঃপ্রণেোদিত ভাবে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে মামলা রুজু করে প্রকাশকে গ্রেফতার করে। অশোকবাবুর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাঁরা কিছুটা সেরে উঠলেই সংশ্লিষ্ট গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবেন।

এ দিন সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সংশ্লিষ্ট গ্যাস সংস্থার হাওড়া জেলা এলপিজি সেলস ম্যানেজার অরিন্দম সিংহ বলেন, ‘‘সমস্ত এজেন্সি এবং ডেলিভারি-ম্যানকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে যে ডেলিভারি-ম্যান এসেছিলেন, তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কি না, খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করা হবে।’’

Advertisement

আদালতে যাওয়ার সময় প্রকাশ জানান, বছরখানেক হল তিনি ডিস্ট্রিবিউটরের থেকে সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি বাড়ি সাইকেলে সরবরাহ করছেন। কোনওদিন এমন ঘটনার সম্মুখীন হননি। তাঁর দাবি, ‘‘কাল সিলিন্ডার লাগানোর সময়েই ওই পরিবারের লোকজন গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছেন বলে জানান। সিলিন্ডারটা বাড়ির বাইরে নিয়ে চলে আসি। ভাল্‌ভের মুখ নাড়াচাড়া করতেই হু হু করে গ্যাস বেরোতে থাকে। অন্য এক ডেলিভারি-ম্যানকে ফোনে জানাই। তাঁকে মিস্ত্রি ডেকে আনতে বলি। আমি একটি স্ক্রু ড্রাইভারের খোঁজে গিয়েছিলাম। তারপরই ওই কাণ্ড। গ্যাসের সংযোগ কী ভাবে করতে হয়, তা অন্য ডেলিভারি-ম্যানদের কাছে শিখেছি। ডিস্ট্রিবিউটরের পক্ষ থেকে কোনও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।’’ সংশ্লিষ্ট গ্যাস সংস্থার শ্যামপুরের ওই ডিস্ট্রিবিউটরের ম্যানেজারকে এ দিন একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কোনও উত্তর দেননি। হোয়াটসঅ্যাপেরও জবাব দেননি।

বুধবার প্রকাশ সিলিন্ডারটি অশোকের বাড়ির বাইরে নিয়ে গেলে ওই পরিবারের মহিলারা কাঠের আগুনে রান্নার তোড়জো়ড় করেন। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। রান্নার জায়গা-সহ বাড়ির অনেকটা অংশেআগুন লেগে যায়। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অশোকের বাড়ির আশেপাশে গাছগুলিওঝলসে গিয়েছে।

প্রতিবেশীরা জানান, সিলিন্ডার থেকে যে ভাবে গ্যাস বেরোচ্ছিল, তাতে বেশ কিছুটা জায়গা ধোঁয়ার মতো হয়ে যায়। তারপরই আগুন লেগে যায়। কাঠে রান্না করছিলেন অশোকবাবুর স্ত্রী ছায়া। পাশে বসেছিলেন তাঁর পুত্রবধূ সুতনিকা ও মেয়ে মামণি প্রামানিক। বাইরে ছিল অশোকের এক নাতি ও এক নাতনি। ঘরে ছিলেন অশোক ও তাঁর ছেলে সুব্রত। স্ত্রী-মেয়ের চিৎকার শুনে ঘর থেকে বেরোনার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরাও আগুনের কবলে পড়েন। অশোকের দাদা কাশীনাথ মণ্ডল, তাঁর স্ত্রী পার্বতী এবং শেখ খোকন নামে এক ডাব বিক্রেতা জখম হন। অশোকের নাতিকে উদ্ধার করতে গিয়ে সামান্য জখম হন এক সিভিক ভলান্টিয়ারও।

বৃহস্পতিবার বেলা বারোটা নাগাদ দমকলের আধিকারিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। হাওড়া জেলা দমকলের এক আধিকারিক জানান, ওই এলাকায় শীঘ্রই একটি শিবির করে গ্রামবাসীদের আগুন মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

দমকলের এক আধিকারিকের ক্ষোভ, ‘‘ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দুপুরে। কিন্তু পুলিশ দমকলকে খবর দিয়েছে রাত বারোটা নাগাদ। সঙ্গে সঙ্গে খবর পেলে দমকলকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করতেন।’’ এ প্রসঙ্গে হাওড়া গ্রামীণ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ সরকার বলেন, ‘‘পুলিশের পক্ষ থেকে দমকলকে কখন খবর দেওয়া হয়েছে জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement