এমন অসংখ্য খাবারের দোকান তৈরি হয় শহরে। নিজস্ব চিত্র।
প্রতি বছরই জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে চন্দননগরে অন্তত ২২-২৫ হাজার ছোট ব্যবসায়ী বাইরে থেকে তাঁদের রকমারি জিনিস নিয়ে হাজির হন। শহরের ৩৩টি ওয়ার্ডে দেড়শোরও বেশি পুজো মণ্ডপের কাছে রীতিমতো মেলার আদলে তাঁরা পসরা নিয়ে বসে পড়েন। বাচ্চাদের খেলনা থেকে গৃহস্থালির টুকিটাকি, ঝুটো গয়না থেকে ঘর সাজানোর জিনিস— সবাই বিকোয়। আর থাকে অসংখ্য খাবারের অস্থায়ী স্টল। আর এ সবের জেরে শহরের পথঘাটে বর্জ্যও বাড়ছে বলে অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের। পুরসভা অবশ্য তা মানছে না।
ভিন্ জেলা থেকে আসা ছোট ব্যবসায়ীরা পুজোর দিনগুলিতে চন্দননগরেই থেকে যান। অস্থায়ী ভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন। তাঁদের নিজস্ব বর্জ্য যেমন রয়েছে, তেমনই তাঁদের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও (চায়ের ভাঁড়, কাগজের কাপ, মাংসের হাড়, আনাজের খোসা ইত্যাদি) বিপুল পরিমাণ বর্জ্য জমে। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, উসবের শহরে যথেষ্ট সংখ্যক জৈব-শৌচালয় থাকে না। বর্জ্য পরিষ্কারেও খামতি থেকে যাচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই পুরসভার আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি বলে তাঁরা মনে করছেন। পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহু প্রান্তিক মানুষ জীবিকার টানে আমাদের শহরে পুজোয় ভিড় করেন। অধিকাংশই প্রাতঃকৃত্য সারেন গঙ্গার পাড়ে। কী করবেন, শহরে সুলভ শৌচালয় ক’টা আছে? পুজো উপলক্ষে জৈব–শৌচালয়ও সেই সংখ্যায় আসে না। মানুষ যত্রতত্র প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেন। পুরসভা সাধ্যমতো চেষ্টা করে।’’ তিনি জানান, পুজো কমিটিগুলি স্টল ভাড়া বাবদ ভাল টাকা নেন। পরিবেশের বিষয়ে তাদেরও দেখা দরকার। সুষ্ঠু আধুনিক বর্জ্য
ব্যবস্থাপনা জরুরি।’’
কি বলছেন পুর কর্তৃপক্ষ?
মেয়র রাম চক্রবর্তী জানান, পুরসভায় ৫০০ কর্মী রয়েছেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে। পুজোর দিনগুলিতে তাঁদের ছুটি থাকে না। কাজের সময় বাড়িয়ে দিনের ২৪ ঘণ্টাই শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে কর্মযজ্ঞ চলে। পুরকর্মীরা আন্তরিক তাঁদের কাজে। প্রচুর পরিশ্রম করেন। কারণ, এই উৎসব শহরের গর্ব।
শহরের ১২টি জায়গায় ১২টি জৈব শৌচালয় রয়েছে দাবি করেও মেয়র মানছেন, ‘‘সেগুলি কোথায় আছে তা জানতে মানুষের সমস্যা হচ্ছে
বলে জেনেছি।’’
চন্দননগর কেন্দ্রীয় পুজো কমিটির অন্যতম সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, ‘‘পুজো কমিটিগুলিকে যেখানে মেলা বসে সেখানে ঘেরাটোপ করে নিকাশি নালার কাছে প্রস্রাবের ব্যবস্থার কথা বলা হয়। তবে, ওই ভাবে অস্থায়ী শৌচাগার করা সম্ভব নয়।
অস্বাস্থ্যকর হবে।’’
এ সবের পরেও পর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে বলে দাবি চন্দননগরের পরিবেশকর্মীদের।