অসহায় মায়ের আর্তি শুনল প্রশাসন, পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি বিধায়কের। — নিজস্ব ছবি।
দুর্গাপুজোর একাদশীর দিন বাড়িতে কিছু না বলেই নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন কার্তিক। দিন কুড়ি বাদে বাড়ি ফেরার পর থেকে তাঁর শিকল বাঁধা জীবন। মা, সুলতা দে বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন। কার্তিকের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য তাঁর নেই। অগত্যা, প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেই বাড়ি থেকে বেরোতে হয় মাকে।
বৈদ্যবাটি পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাজারবাগান এলাকার বাসিন্দা সুলতা। তাঁর একমাত্র ছেলে কার্তিকের বয়স এখন ২৯ বছর। ছেলেবেলা থেকে অল্পেই রেগে ওঠার স্বভাব ছিল তাঁর। মাসদুয়েক ধরে বাড়ির জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দিতেন। তাই ছেলেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন সুলতা। পরিচারিকার কাজ করে কোনও মতে সংসার চলে। ছেলের ভাল চিকিৎসাও করাতে অক্ষম। মানসিক সমস্যার কারণেই বয়স হলেও কোনও কাজকর্ম করতে পারেন না কার্তিক।
এর মধ্যে পুজোর একাদশীতে হঠাৎই বাড়ি থেকে বেপাত্তা হয়ে যান তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান না মেলায় অবশেষে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। দিন কুড়ি পরে নিজেই বাড়ি ফিরে আসেন কার্তিক। সুলতার দাবি, তার পর থেকে ছেলের আচরণ আরও অস্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে ঘরে বন্ধ করে রাখলে এমন চিৎকার করতে থাকেন যে,প্রতিবেশীদের সমস্যা হয়। কাজে বাড়ির বাইরে যেতেই হয় সুলতাকে। তাই ছেলেকে গ্রিলের সঙ্গে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। এ ভাবেই শিকল বাঁধা অবস্থায় দিন কাটছে কার্তিকের। কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন? উত্তর জানা নেই সুলতার। ছেলের চিকিৎসা করানোর আর্থিক সামর্থ্য তাঁর নেই। তাই বাধ্য হয়েই সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন সকলকে। তিনি বলেন,‘‘বাড়ি ফেরার পরই মাথাটা একদম খারাপ হয়ে গেছে। মন চায় না। কিন্তু তা-ও বাধ্য হয়ে বেঁধে রেখে যাই।’’
খবর পেয়ে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিধায়ক। স্থানীয় বিধায়ক অরিন্দম গুঁই বলেন, ‘‘এটা খুবই অমানবিক ঘটনা। বিষয়টি জানা ছিল না। যুবকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে কিছু একটা ব্যবস্থা করব।’’
বিধায়কের প্রতিশ্রুতি পেয়ে খানিকটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন সুলতা। চিকিৎসা করিয়ে ছেলে সুস্থ হলে তাঁদের দুঃখের দিনের অবসান হবে— এখন এই স্বপ্নেই বিভোর অসহায় মা।