অতুল্য ঘোষ।
হুগলি জেলার ইতিহাসে হরিপালের জেজুর গ্ৰাম খুবই বিখ্যাত। পারিবারিক সূত্রে এখানকার সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক ছিল জাতীয় কংগ্রেসের নেতা, বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্ৰামী এবং সাংসদ অতুল্য ঘোষের। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। সুপারিশের জোর ছিল না। ছিল না অর্থবল। শরিকি বিবাদে জর্জর একান্নবর্তী পরিবার থেকে উঠে আসা ছাপোষা বাঙালি ছিলেন অতু্ল্যবাবু। মেধা, বুদ্ধি, শ্রমক্ষমতা সম্বল করে, নিজের অনন্যতায় ও ত্যাগের আদর্শের জোরে তিনি মহাত্মা গান্ধীর প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।
জেজুর গ্ৰামে বাল্যকালে আসা-যাওয়া নিয়ে অতু্ল্যবাবুর কিছু স্মৃতিকথা ও অকপট স্বীকারোক্তি তাঁর চরিত্রের উদারতা ও নির্ভীকতার দিকটি তুলে ধরে। কলকাতা থেকে প্রতি বছর পুজোর সময়ে অতু্ল্যবাবু গ্ৰামের বাড়িতে আসতেন। এই গ্ৰামে ঘোষ ও বসু— এই দুই পরিবার ছিল বর্ধিষ্ণু জমিদার পরিবার। উভয়ের মধ্যে বেশ রেষারেষিও ছিল। দুর্গাপুজোর সময় বাড়ির কর্তারা অহমিকার জন্য খুব একটা আসতেন না। তবে বাড়ির গিন্নিরা, বউয়েরা, ছেলেরা সবাই আসতেন।
বিজয়ার দিন অতু্ল্যবাবু শতাধিক জনকে প্রণাম করতেন। গ্ৰামে যাত্রা ও হরিনামের দল ছিল। এই দু’টি জায়গায় একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যেত। যাঁরা সাধারণত বাবুদের কাছে বসতেন না, বা বসার সুযোগ পেতেন না, তাঁরাও বাবুদের পাশে বসে গান শুনতেন। অর্থাৎ, যাত্রা-হরিনামের প্রভাবে গ্ৰামে জাতপাতের বেড়াজাল ভেঙে যেত। জমিদার, প্রজা একসঙ্গে যাত্রায় অভিনয় করতেন।
সাত বছর বয়সের একটি সুন্দর অভিজ্ঞতার কথা অতু্ল্যবাবু উল্লেখ করেছেন। তিনি হঠাৎ দেখলেন, যিনি যাত্রায় রানি, তিনি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে বিড়ি খাচ্ছেন। রানি কী করে বিড়ি খাবেন! বালক অতুল্যর মাথায় বজ্রাঘাত হল। রানি তো মহাসম্মানিতা। এই সব ভেবে সেই দিন থেকেই তিনি যাত্রা দেখা বন্ধ করলেন। এ জন্য কয়েক বছর তিনি যাত্রা দেখেননি।
(তথ্য: সন্দীপ সিংহ, প্রধান শিক্ষক, জামাইবাটী উচ্চ বিদ্যালয়)