আরামবাগ পুরসভায় তৃণমূল প্রার্থীদের হয়ে মহামিছিলে হাজির মন্ত্রী পুলক রায়। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
হুগলির ১২টি পুরসভাতেই অবাধ ভোটের আশ্বাস দিয়েছে শাসকদল তৃণমূল। তা নিয়ে দলের কর্মীদেরও কড়া অনুশাসনে বাঁধার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ‘অবাধ’ পুরভোটের বিষয়টি নিয়ে বিদ্রূপের হাসি আরামবাগের পুরবাসীদের ঠোঁটে। তাঁরা বলছেন, ‘‘আরামবাগ জেলার মধ্যে বরাবরই অন্যরকম। এখানে অবাধ ভোটের রীতি নেই। প্রার্থীকে হাড়ের ডাক্তার ঠিক করে রাখারও হুমকি শুনতে হচ্ছে। সময়ই বলবে, কী হবে!’’
বিক্ষিপ্ত কিছু হুমকি এবং পোস্টার-ফেস্টুন ছেঁড়া ছাড়া বড় কোনও অভিযোগ ওঠেনি। তারপরেও কেন স্বচ্ছ ভোট নিয়ে এত সংশয়? ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আন্দিমহলের বছর বাষট্টির এক বৃদ্ধের অভিযোগ, “বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার বহিরগতদের এনে ঘরে ঘরে প্রচারের নামে চোখ পাকানো চলছে। বুথ দখল করে ভোট করানোর এই নিশানা আমাদের চেনা। পুলিশে আর
ভরসা নেই।”
২ নম্বর ওয়ার্ডের বৃন্দাবনপুরে মধ্যবয়স্ক এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘বাম আমলে দুপুর ১২টা থেকে বুথ দখল হত। তৃণমূল তো সকাল ৯টা থেকেই বহিরাগতদের নিয়ে বুথ দখল করে ভোট করাবে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক প্রৌঢ় বলেন, ‘‘২০১৫ সালে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৬টি ওয়ার্ডে জিতে বোর্ড গঠন করেছিল। তারপরও মাত্র তিনটি ওয়ার্ডের ভোটেও বুথ দখল করে ১৯টি আসনই নিশ্চিত করে।’’
শহরের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আরামবাগ পুরভোটের ক্ষেত্রে এতদিন খালি ভোটের দিনই বহিরাগত দেখা মিলছিল। এ বার প্রচারের শুরু থেকেই আরামবাগের গৌরহাটি-১, সালেপুর-২, মায়াপুর-১, তিরোল এবং বাতানল পঞ্চায়েত এলাকা এবং গোঘাটের বেঙ্গাই, বালি, কুমুড়শা ইত্যাদি দলের ডাকাবুকো নেতা-কর্মীদের দেখা যাচ্ছে। এটাই অশনি সঙ্কেত।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর ভোট পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পরিস্থিতি বলছে, তৃণমূল নির্বিঘ্নে ভোট করতে দেবে না। বুথ দখল হবে।” বিজেপির রাজ্য সম্পাদক বিমান ঘোষ বলেন, “এখনই যা পোস্টার-ফেস্টুন ছেঁড়া আর হুমকি চলছে, তাতে ভোট কতটা সুষ্ঠু হবে, আদৌ মানুষ ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।” একই বক্তব্য আরামবাগ ব্লক কংগ্রেসের রাজীব গান্ধী পঞ্চায়েত রাজ সংগঠনের সভাপতি তথা ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ পালেরও।
৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের স্বপন নন্দীর বিরুদ্ধে একমাত্র প্রার্থী কংগ্রেসের খন্দকার আনসার আলির অভিযোগ, “আমাকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, হাড়ের ডাক্তারকে যেন বলে রাখি। ভোট গণণার পরেই সেখানে আমাকে পাঠানো হবে।” স্বপন নন্দীর অবশ্য দাবি, “এমন কিছুই হয়নি।’’ চার নির্দল প্রার্থী ১২ নম্বরের লুৎফা বেগম, ১৯ নম্বরের রিক্তা সরকার এবং ১৬ নম্বরের আজিজুল হোসেন ও রামকৃষ্ণ মান্ডি জানিয়েছেন, বুথ দখল করতে এলে পাল্টা প্রতিরোধ হবে। পুরো বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের শহর কমিটির সভাপতি তথা ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী প্রদীপ সিংহরায় বলেন, “কোথাও কোনও অন্যায়ের সম্ভবনা নেই। দল ১৯টি ওয়ার্ডেই জিতবে। ভয়মুক্ত ভোট হবে।”