শব্দবাজির দৌরাত্ম্য কম আরামবাগ মহকুমায়
Kali Puja 2023

গণ-সচেতনতা আর পুলিশি তৎপরতাতেই সাফল্য, দাবি

রবিবার রাতে কিছু বাজি ফেটেছে ঠিকই। কিন্তু তার আওয়াজ কান ফাটানো বা বুক কাঁপানো ছিল না। সোমবার তা আরও ক্ষীণ।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৩
Share:

আতশবাজি পোড়ানোর ধুম গোঘাটে। নিজস্ব চিত্র।

Advertisement

বছর তিনেক আগেও কালীপুজোর আগে থেকে কান পাতা দায় হত আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায়। করোনা-পরবর্তী সময়ে সেই ছবি অনেকটাই বদলাতে শুরু করেছিল। আর চলতি বছরে শব্দবাজির তাণ্ডব নেই বললেই চলে এই এলাকায়। রবিবার রাতে কিছু বাজি ফেটেছে ঠিকই। কিন্তু তার আওয়াজ কান ফাটানো বা বুক কাঁপানো ছিল না। সোমবার তা আরও ক্ষীণ। এটা শুধু কোনও প্রশাসনিক স্তোক নয়, এলাকার বাসিন্দারাও এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন সে কথা।

সারা রাজ্য জুড়ে যখন শব্দতাণ্ডবে সকলে জেরবার, তা হলে কোন মন্ত্রবলে ‘অন্য রকম’ হল আরামবাগ মহকুমা? কী করে বেরোল সে অতীতের রেওয়াজ ছেড়ে?

Advertisement

পুলিশ-প্রশাসনের দাবি, লাগাতার ধরপাকড় চলছিলই। আর পুজোর মাস খানেক আগেই মহকুমার বাজি উৎপাদনের মূল ক্ষেত্র খানাকুলের নতিবপুর শাহ পাড়া, গোঘাটের রাধাবল্লভপুর, মহেশপুর, আরামবাগের চণ্ডীবাটী গ্রামের বিভিন্ন পাড়া কার্যত সিল করে দেওয়া হয়েছিল। তারই সুফল মিলেছে।

চার পুরুষ ধরে বাজি তৈরি কারবারে যুক্ত থাকা গোঘাটের মহেশপুরের শেখ লাল্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গোপনে গত বছর পর্যন্ত কারবার করলেও পুলিশ প্রশাসনের কড়াকড়িতে তা বন্ধ। এক মাস হল তিনি ওড়িশায় কাঠের কাজে গিয়েছেন। এসডিপিও(আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডল বলেন, “নিষিদ্ধ শব্দ বাজি রুখতে ধারাবাহিক অভিযান, নজরদারি, প্রচার চলছে। মানুষ সচেতন হচ্ছেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে।”

তিন বছর আগেও কালীপুজোর দুপুর থেকেইশহরের যে সব রাস্তায় কানে চাপা দিয়ে পারাপার করতে হত, সেই গৌরহাটি মোড়, পিসি সেন রোড সংলগ্ন পুরোনো বাজার, ব্লক পাড়া, বসন্তপুর মোড় ইত্যাদি এলাকা রবি ও সোমবার শান্ত ছিল। যাঁরা বাজি পোড়াচ্ছিলেন, তাঁদের হাতে ছিল ফুলঝুরি, রংমশাল, তুবড়ি, চরকা আর ফানুস।

শব্দবাজি নিয়ে সচেতনতার কথা জানিয়ে শহরের মিঁয়াপাড়ার বছর পঁয়তাল্লিশের শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “এই প্রথম প্যাকেট চার ফুলঝুড়ি কিনেছি। দীপাবলি তো আলোর উৎসব। ছেলেকে বুঝিয়েছি। কাজ হয়েছে।’’ আবার বসন্তপুরের প্রৌঢ় ব্যবসায়ী সুভাষ সরকারের কথায়, ‘‘মানত পূরণ করতে একটাই মাত্র ছোট চকলেট বোম কিনে ফাটিয়েছি। আর দোকানেও শব্দবাজি মিলছে না। এই আকালটা উপকারে এসেছে।’’

শব্দতাণ্ডব রুখতে পুজো কমিটিগুলির ভূমিকাও কম নেই। শহরের কালী পুজোরগুলোর মধ্যে অন্যতম ৪৬ বছরে পা দেওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের কর্মকর্তা তাইবুল হোসেন ওরফে নীলু বলেন, “শব্দদূষণ রুখতে আমরা ক্লাবের তরফে ২০১৬ সাল থেকেই বাজির জন্য বরাদ্দ বন্ধ করেছি। এমনকি এখন চৌহদ্দির মধ্যে কোন ভক্তকেও শব্দবাজি ফাটাতে দেওয়া হয় না।’’ একই কথা জানিয়েছেন শহরের ঋষি অরবিন্দ ক্লাবের কর্মকর্তা রাজেশ চৌধুরী এবং গোঘাটের কামারপুকুরের সবুজ সঙ্ঘের সভাপতি সোম্যপ্রিয় চৌধুরী।

পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা মহকুমার একটি সংগঠনের সম্পাদক মঙ্গল সাউ বলেন,
“পুলিশের সক্রিয়তা, সমাজ মাধ্যম এবং আমাদের মতো সংগঠনগুলির প্রচারে সাফল্য মিলছে। সকলকে আমরা সচেতন করতে পেরেছি, এখানেই আমাদের সার্থকতা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement