\\বন্দি: দলছুট হাতিটিকে ক্রেনে তোলার তোড়জোড়। পূর্ব বর্ধমানের রায়নার বুলচন্দ্রপুর মাঠে।মৃত: প্রসেনজিৎ ধারা (ইনসেটে)। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ, নিজস্ব চিত্র
আরামবাগ শহরে শনিবার দিনভর তাণ্ডব চালানোর পরে রাতে গোঘাটেও তাণ্ডব চালিয়েছিল দলছুট বুনো দাঁতালটি। তাকে খেদানোর চেষ্টা করে হুলা পার্টি। প্রশাসন সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় তা দেখতে গিয়ে হাতির সামনে পড়ে যান গোঘাটের কুমুড়শার প্রসেনজিৎ ধারা (৩২)। হাতিটি তাঁকে শুঁড়ে করে আছড়ে ফেলে বুকে পা তুলে দেয়। রবিবার বিকেলে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ওই যুবক মারা যান।
এ দিন সকালে হুগলি লাগোয়া পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়নার উচালনে হাতিটিকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করে বন দফতর। কিন্তু আরামবাগ-গোঘাটে ক্ষয়ক্ষতির সরেজমিন তদন্ত বন দফতর শুরু করেনি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। বন দফতরের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ আরামবাগের পুরপ্রধানসমীর ভান্ডারীও।
পূর্ব বর্ধমানের জেলা বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, ‘‘আমরা হাতিটিকে জঙ্গলে ফেরানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু, উচালনে ঢুকে পড়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে দু’রাউন্ড ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে বন্দি করা হয়েছে।’’ রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল সৌমিত্র দাশগুপ্ত জানান, হাতিটিকে রেডিয়ো-কলার পরানো হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বক্সা জঙ্গলে পাঠানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির তদন্ত হবে। জঙ্গলের বাইরে হাতির দ্বারা কারও মৃত্য ঘটলে বা ক্ষয়ক্ষতি হলে আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।’’
প্রসেনজিৎ বাদেও আরও তিন জন শনিবার হাতির হানায় জখম হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে আরামবাগের বাসিন্দা, বছর চল্লিশের মিলন খটিক আশঙ্কাজনক অবস্থায় এসএসকেএমে ভর্তি। তিনি সামনে হাতি দেখেও পালানোর চেষ্টা না করে প্রণাম করছিলেন। হাতিটি তাঁকে শুঁড়ে আছড়ে ফেলে দাঁত দিয়ে আঘাত করে। জখম আরামবাগের ভারতী মণ্ডল এবং কালীপুরের অপু জানা আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাতির শুঁড়ের ঝাপটায় পড়ে মাথায় চোট পান ভারতী। অপু হুলাপার্টিতে ছিলেন। হাতির তাড়ায় গর্তে পড়ে তিনি জখম হন। তাঁরা বিপন্মুক্ত বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
শনিবার ভোরে হাতিটিকে প্রথম দেখা গিয়েছিল আরামবাগে দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ে কালীপুরের বিষ্ণুপর মৌজায়। আরামবাগের চাঁদুর বন দফতরের কর্মীরা এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। মাইকে মানুষকে সতর্ক করা হয়। ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। আরামবাগ শহরে কিছু মোটরবাইক, গুমটি নষ্ট করেছে হাতি। আলু এবং বোরো ধানের খেততছনছ হয়েছে।
সমীর ভান্ডারীর অভিযোগ, ‘‘বন দফতরের উদাসীনতাতেই ক্ষয়ক্ষতি হল। শনিবার দুপুরে মূল লোকালয়ে ঢোকার আগেই আমরা ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়তে বলেছিলাম। তা না করাতেই প্রাণহানি এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতি। ক্ষয়ক্ষতি বন দফতর খতিয়ে দেখছে না।’’ গোঘাট-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনোরঞ্জন পালেরও অভিযোগ, ‘‘এক যুবক মারা গেলেন। বহু আলু, ধানের জমি নষ্ট হয়েছে। বন দফতর ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনাকরছে না।’’
বন দফতরের দাবি, হাতিটিকে পশ্চিম বর্ধমানের গড়বেতার জঙ্গলে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রায় ৮০ কিলোমিটার ঘুরে গড়বেতার দিক থেকে রায়নায় ঢুকে পড়ে হাতিটি। খবর ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্ক তৈরি হয়। তার পরেই ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করা হয় হাতিটিকে।