শ্রীরামপুরের বাড়িতে কেট এবং চন্দন। নিজস্ব চিত্র
চার বছর বাদে ব্রাজিলের জার্সিটা আবার আলমারি থেকে বের করেছেন তিনি।
এতদিনে বাংলাটা অনেকটা রপ্ত হয়েছে। শুক্তো থেকে রুই, ইলিশের ঝোল সবই রাঁধতে পারেন। ভালবাসেন শাড়ি পরতেও। তবে, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ব্রাজিলের জার্সিই গায়ে চাপিয়ে নিয়েছেন কেট রেজিনা সিলভা ইয়ামাগুটি। শ্রীরামপুরের বাঙালিবাবু চন্দন রায় ওরফে ডোডোর স্ত্রী।
এ দিন ঘরের কাজ তাড়াতাড়ি সেরে রাতে বসে পড়েন টিভির সামনে। ব্রাজিলের কোনও খেলাই মিস নয়। তাঁর এখন একটাই প্রার্থনা— বিশ্বকাপ যেন নেমারের হাতে ওঠে।
সমাজমাধ্যমে কেটের সঙ্গে প্রেম হয় মাহেশের ডোডোর। সেই টানে ২০১৬-র ডিসেম্বরে একাই ব্রাজিল থেকে এখানে চলে আসেন কেট। ’১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁদের বিয়ে হয়। গোড়া থেকেই বাংলার সংস্কৃতিতে নিজেকে মানিয়ে নেন কেট। জানালেন, বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে তিনি রীতিমতো উত্তেজিত। চন্দনও ব্রাজিলের অন্ধ ভক্ত।
ব্রাজিল আর ফুটবল সমার্থক। আট থেকে আশি— সবাই ফুটবলে মজে থাকেন। কেট জানান, স্কুলে পড়ার সময় ফুটবল, বাস্কেটবল, ভলিবল সবই খেলেছেন। একটি ক্লাবে সাঁতার কাটতেন। ব্রাজিলের খেলা থাকলে, সে দেশের রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়।
গত বার বিশ্বকাপের সময় মাহেশ কলোনির গলি ব্রাজিলের পতাকায় ছয়লাপ দেখে, উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিলেন কেট। বৃহস্পতিবার খোঁজ নিলেন, শহরের অলিগলি ব্রাজিলের পতাকায় কতটা সেজেছে। কেটের কথায়, ‘‘এখানকার সংস্কৃতিকে আপন করে নিয়েছি। তবে, আমার দেশকে মিস করি। সেই কারণেই বোধহয়, বিশ্বকাপের সময় আমার আবেগটা অনেক বেশি হচ্ছে।’’
কেটের বাবা রজার কিয়োজি ইয়ামাগুটির বয়স ৬৬ বছর। স্থানীয় ভেটারেন্স ক্লাবে এখনও ফুটবল খেলেন। চন্দন বলেন, ‘‘শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে আমিও ওঁদের সঙ্গে ফুটবল খেলেছি। ফুটবলে ব্রাজিল তথা লাতিন আমেরিকার শিল্পের ভক্ত আমি ছোটবেলা থেকেই। ওখানে গিয়ে দেখেছি, স্ট্রাইকার এত পাস পান, দু’-একটা গোল হয়েই যায়। আমিও বেশ কয়েকটা গোল করেছি।’’
ব্রাজিলে গিয়ে সেখানকার জার্সি উপহার পেয়েছিলেন চন্দন। কথা বলতে বলতে ব্রাজিল থেকে আনা কফিতে চুমুক দেন চন্দন-কেট। তাঁদের ছেলে ইথান ওরফে গোগোলের বয়স এখন পাঁচ। সে শেওড়াফুলির একটি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে পড়ে। ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দেন কেট। নিয়েও আসেন। নিজে দোকান-বাজারও করেন। কোনও অসুবিধা নেই। সব কিছুতেই মানিয়ে নিয়েছেন।
শুধু চার বছর বাদে ব্রাজিলের জন্য মনটা একটু বেশি উতলা।