—প্রতীকী চিত্র।
চুঁচুড়া আদালত এবং পুলিশ লাইন প্রায় লাগোয়া। তারই মধ্যে রাস্তার ধারে এক ভবঘুরে বৃদ্ধার মাথায় প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে অনবরত আঘাত করে চলেছেন এক প্রৌঢ়। সোমবার দুপুরে এই অমানবিক দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন। কিন্তু প্রতিবাদ করতে এগিয়ে যান শুধু ব্যান্ডেলের সুতীর্থা ভৌমিক নামে এক যুবতী। তাঁর ধমকে প্রৌঢ় থামেন। আদালত থেকে চলে আসেন আইনজীবীরা। সুতীর্থার পাশে দাঁড়ান তাঁরা। রাস্তায় যানজট হতেই এগিয়ে আসেন কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশ। খবর দেন থানায়। পুলিশ এসে অভিযুক্তকে নিয়ে গেলে শান্ত হন সুতীর্থা।
কী ‘অপরাধ’ বৃদ্ধার?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ লাইনের ধারে এক কালীমন্দিরের প্রণামী বক্সের সামনে হাতে-পায়ে কাদামাখা অবস্থায় বসে ছিলেন অশীতিপর ওই বৃদ্ধা। সেই কারণে নাকি কেউ প্রণামী দিতে মন্দিরে আসছিলেন না, এমন দাবি করে সেখানকার চা বিক্রেতা ওই প্রৌঢ় অসুস্থ ওই বৃদ্ধাকে রাস্তার অপর দিকের একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে বসান। তারপরেই মারধর করেন। বৃদ্ধা চেঁচাচ্ছিলেন। ব্যথা সহ্য করতে না পেরে কেঁদেও ফেলেছিলেন।
ব্যক্তিগত কাজ সেরে তখন স্কুটি নিয়ে ফিরছিলেন সুতীর্থা। ওই দৃশ্য দেখেই স্কুটি দাঁড় করিয়ে এগিয়ে যান তিনি। শুরু হয় প্রতিবাদ। বৃদ্ধা জানান, তাঁর ঘরবাড়ি নেই। বেশ কিছু বছর ধরে চুঁচুড়া শহরের এ দিক, সে দিকে ঘুরে বেড়ান। অনেকেই ভালবেসে টাকা অথবা খাবার দেন। তাতেই চলে যায়। কিন্তু এ ভাবে কেউ মারেনি।
যুবতী পরে বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে একজন অসহায় মহিলাকে কেউ মারবেন, অথচ কেউ কিছু বলবেন না, এটা হতে পারে না। আমি যেখানে দেখব, সেখানেই দাঁড়াব।’’
পুলিশ জানিয়েছে, ওই প্রৌঢ় নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। সুতীর্থার সম্মতিতে তাই আপাতত সতর্ক করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই প্রৌঢ়ের দাবি, ‘‘আমি জোরে মারিনি। বৃদ্ধাকে চিনি। মাঝেমধ্যে খেতেও দিই। কিন্তু মন্দিরের সামনে থেকে সরছিলেন না। তাই বোতলটা দিয়ে ভয় দেখাচ্ছিলাম। দু’একটা লেগে যেতে পারে।’’
ঘটনাটি অনেকের চোখে পড়লেন সুতীর্থার আগে আর কেউ প্রতিবাদ না-করায় শহরের অমানবিক মুখ ফুটে উঠল বলে মনে করছেন অনেকে। ভবঘুরেদের নিয়ে কাজ করা চুঁচুড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার ইন্দ্রজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘অমানবিক ঘটনা। সদর শহরের বুকে এমন ঘটনা কাম্য নয়। মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।’’ শিক্ষিকা শুভ্রা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভাবতে অবাক লাগছে সদর শহরে প্রকাশ্যেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে! অন্যদের আগেই এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।’’