উলুবেড়িয়া থানার সামনে বিজেপির বিক্ষোভ। ছবি: সুব্রত জানা
জোর করে তাঁদের জমি ‘দখল’ করে রাস্তা বানানো হয়েছে। অভিযোগ, এর নেতৃত্বে ছিল দুই তৃণমূল নেতা দেবাশিস রানা এবং কুতুবুদ্দিন মল্লিক। তিনি প্রতিবাদ করায় বিষয়টি ‘ভাল ভাবে নেয়নি’ ওই দুই নেতা। স্ত্রীকে গণধর্ষণের পিছনে সেটি অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন হাওড়ার বাগনানের নির্যাতিতার স্বামী। গণধর্ষণে এফআইআর-এ নাম থাকা পাঁচ জনের মধ্যে দেবাশিস এবং কুতুবুদ্দিন মূল অভিযুক্ত। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা অবশ্য ধরা পড়েনি।
দেবাশিস আমতা বিধানসভা যুব তৃণমূল সভাপতি। কুতুবুদ্দিন দলের বাইনান অঞ্চল সভাপতি। খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, এলাকায় তোলাবাজি-সহ নানা অভিযোগ আছে তাদের নামে। মাথার উপরে শাসক দলের ছাতা থাকায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতেন না। বাইনান ষষ্ঠীতলায় দেবাশিসের ফটোকপির দোকান আছে। কুতুবুদ্দিন কড়িয়ায় একটি রেশন দোকানের মালিক। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ব্যবসার আড়ালে দু’জনে ‘দাদাগিরি’ করে বেড়াত। তাদের বিরুদ্ধে
অর্থের বিনিময়ে অন্যের জমি দখলের অভিযোগও উঠেছে। নির্যাতিতার স্বামী বিজেপি কর্মী। অভিযোগ, তিনিও ওই দু’জনের ‘দাদাগিরি’র শিকার।
নারিট-বাইনান রাজ্য সড়কের ধারেই ওই বিজেপি কর্মীর বাড়ি। ২০০৮ সালে বাড়ির পিছনে পাঁচ কাঠা জমি তাঁর বাবা এক ব্যক্তিকে বিক্রি করেছিলেন। লকডাউনের সময় ওই ব্যক্তি জমিটি অন্য এক জনকে বেচে দেন। কিন্তু জমিতে যাওয়ার রাস্তা ছিল না। ওই ক্রেতা বিজেপি কর্মীকে বিষয়টি জানালে তিনি রাস্তার জন্য জমি কিনতে বলেন। তাঁর অভিযোগ, এর পরেই দেবাশিস এবং কুতুবুদ্দিন তাঁকে রাস্তার জন্য জমি ছেড়ে দিতে বলে। তিনি রাজি না হওয়ায় ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘‘ভোটে তৃণমূলজেতার পরে গত ৭ মে কুতুবুদ্দিনের নেতৃত্বে শ’খানেক তৃণমূল লোক আমার জমি দখল করে ওই ব্যক্তির জমি পর্যন্ত রাস্তা বানিয়ে দেয়। প্রতিবাদ করলে খুনের হুমকি দেয়। মোটা টাকার বিনিময়ে কুতুবুদ্দিন এই কাজ করেছিল। দেবাশিস সামনে না এলেও পিছন থেকে কলকাঠি নেড়েছিল।’’
বিজেপি কর্মীর দাবি, এই অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য তিনি বাগনান থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁর অভিযোগ নেয়নি। বাগনান থানা জানিয়েছে, এ বিষয়ে কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে, গণধর্ষণের ঘটনার তদন্তের প্রেক্ষিতে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দেবাশিস এবং কুতুবুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আমতার তৃণমূল বিধায়ক সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘ওই বিজেপি কর্মীর বাড়ির পাশে রাস্তা বানানো নিয়ে একটা গোলমাল হয়েছিল, শুনেছি। তবে বিস্তারিত বলতে পারব না।’’