Kali Puja 2021

Kali Puja 2021: বাতাসে বাজির হানা, কোন্নগরে দূষণ ৪ গুণ

পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, বাজারে সবুজ বাজির অস্তিত্ব কার্যত মেলেনি। উল্টে ব্যাপক পরিমাণে শব্দবাজি এবং আতশবাজি বিক্রি হয়েছে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

কোন্নগর শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৪১
Share:

কামারপুকুর ইয়ং বেঙ্গল ক্লাবে চলছে বাজি পোড়ােনা। নিজস্ব চিত্র।

সাধারণ দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার অর্থাৎ কালীপুজোর রাতে শুধুমাত্রা কোন্নগরেই বাজির কারণে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার মাত্রা বেড়েছে তিন-চার গুণ। বেড়েছে শব্দদূষণের মাত্রাও। ‘যুক্তিমন কলা ও বিজ্ঞান কেন্দ্র’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে এমনই দূষণচিত্র।

Advertisement

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, জেলার অন্যান্য জায়গাতেও বাতাস কতটা দূষণের কবলে পড়েছিল, কোন্নগরের পরিস্থিতি দেখেই অনুধাবন করা যায়। কারণ, বাজি পুড়েছে সর্বত্র। করোনা আবহে পরিবেশকর্মীরা চেয়েছিলেন, শব্দবাজির পাশাপাশি আতশবাজিও বন্ধ থাক। রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কালীপুজোয় রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধব বা সবুজ বাজি পোড়ানোর নির্দেশিকা জারি করে। সুপ্রিম কোর্ট পর্ষদের নির্দেশিকার পক্ষেই মত দেয়।

পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, বাজারে সবুজ বাজির অস্তিত্ব কার্যত মেলেনি। উল্টে ব্যাপক পরিমাণে শব্দবাজি এবং আতশবাজি বিক্রি হয়েছে। সেগুলিই পুড়েছে কালীপুজোর সন্ধ্যায়। উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটী, পোলবার সুগন্ধা-সহ নানা জায়গায় মাঝরাতেও বাজি ফেটেছে। এই পরিস্থিতির দায় কে নেবে, সেই প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক তথা পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, পরিবেশ দফতর, রাজ্য সরকার, জেলা প্রশাসন— সবাইকেই এর দায় নিতে হবে।’’ তাঁর আক্ষেপ, বিভিন্ন হাসপাতালের আশপাশেও যথেচ্ছ পরিমাণে বাজি পুড়েছে।

সাধারণ দিনের তুলনায় বাতাসে ধূলিকণা বা শব্দের মাত্রার ফারাক কালীপুজোর সন্ধ্যায় কতটা, তা মাপতে পথে নেমেছিলেন যুক্তিমনের সদস্যেরা। রবিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁরা কোন্নগরের বিভিন্ন এলাকায় যন্ত্র দিয়ে তা পরিমাপ করেন। বৃহস্পতিবারেও ওই সময়ে জায়গাগুলিতে একই ভাবে পরিমাপ করা হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই শহরের চটকলধারে রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) মাত্রা ছিল প্রতি কিউবিক মিটারে ১১১ মাইক্রোগ্রাম। বৃহস্পতিবার একই জায়গায় ওই মাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ৬১৫ মাইক্রোগ্রামে। জিটি রোড এবং গঙ্গা লাগোয়া বাটা মোড়ে এ দিন ওই মাত্রা ছিল ৪৪০। রবিবার তা ছিল ১১৭। এ ভাবেই সাধারণ দিনের তুলনায় ওই মাত্রা কালীপুজোর রাতে তিন-চার গুণ বেড়েছে।

রেখচিত্রের ঊর্ধ্বগতি স্পষ্ট হয়েছে অপেক্ষাকৃত পুরু ধূলিকণার (পিএম ১০) ক্ষেত্রেও। বাটা মোড়ে রবিবার যেখানে এর মাত্রা ছিল ১৩৫, বৃহস্পতিবার তা বেড়ে হয় ৫১০। চটকলধারে ১৩৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৩৫। কোন্নগর রবীন্দ্রভবনের সামনে এর মাত্রা রবিবার ছিল ১১৯। বৃহস্পতিবার তা চার গুণেরও বেশি।

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, ঘিঞ্জি এলাকায় এমনি সময়েই শব্দ বা বায়ুদূষণ নির্দিষ্ট মাত্রা ছাপিয়ে যায়। উৎসবের দিন অনেকাংশে বেড়ে পরিবেশকে বিষিয়ে দেয়। মানুষের পাশাপাশি পশুপাখির ক্ষতিও কম হয় না।

যুক্তিমনের সম্পাদক জয়ন্তকুমার পাঁজা জানান, দূষণ মাপার পাশাপাশি বাজি ব্যবহারকারীদের সচেতন করার কাজও তাঁরা করেছেন। বিভিন্ন উৎসবের সময় এই কাজ তাঁরা চালিয়ে যাবেন। পরিবেশকর্মীদের অনেকেই বলছেন, ডিজে নিয়ে আন্দোলনের জেরে অনেক জায়গাতেই এর ব্যবহার বন্ধ হয়েছে। কালীপুজোর দিন বহু জায়গায় লাউডস্পিকারের ব্যবহারও ছিল নিয়ন্ত্রিত। বাজিবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত গৌতম সরকার বলেন, ‘‘নাগরিক আন্দোলনের জেরে বাজি নিয়েও বহু মানুষ সচেতন হয়েছেন। লাগাতার প্রচারে সচেতনতার পরিধি অনেকাংশে বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী। সরকারকেও উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement