—প্রতীকী চিত্র।
হাই কোর্টের রায়ের পরে চাকরিহারা শিক্ষকদের অনেকেই যেমন হতাশ, তেমনই অনেকে ক্ষুব্ধও। তাঁদেরই একাংশ দাবি করছেন, দুর্নীতি না করে যোগ্যতায় তাঁরা চাকরি পেয়েছেন।
তা সত্ত্বেও চাকরি খোয়াতে হল। রায়ের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ভাবেও সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কেউ কেউ।
২০১৬ সালের নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার আদালতের ওই রায়ের জেরে অন্যান্য জেলার মতো হাওড়াতেও বহু শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সংখ্যায় তা কত, সে বিষয়ে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতর থেকে কোনও তথ্য মেলেনি। রায় নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক অজয়কুমার পাল।
তবে, জেলা তৃণমূল শিক্ষক সমিতির নেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘রায় ঘোষণার পরে ২০১৬ সালের প্যানেল থেকে চাকরি পাওয়া অসংখ্য শিক্ষকের কাছ থেকে আমি ফোন পেয়েছি। সকলের সঙ্গে কথা বলে যা জেনেছি, তাতে প্রায় এক হাজার জনের চাকরি নিয়ে সঙ্কট দেখা দিয়েছে।’’
জেলার বহু বিদ্যালয়ে এক বা দু’জন করে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে বিতর্কিত প্যানেল থেকে। বেশিরভাগই একাদশ-দ্বাদশের জন্য। ওই শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, দুর্নীতি করে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে মেধার ভিত্তিতে নিযুক্তদের গুলিয়ে ফেলেছে আদালত। মেধার ভিত্তিতে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, এই রায় তাঁদের প্রতি অবিচার বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।
বালি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ডালিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০১৮
সালে চাকরি পান। তিনি বলেন, ‘‘আমি নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ দু’টি বিভাগেই নির্বাচিত হই।
বেতন বেশি বলে একাদশ-দ্বাদশের চাকরি নিই। আমি পুরোপুরি
মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছে। এই রায় আমার কাছে অবিচার ছাড়া
কিছু নয়। এসএসসি সুপ্রিম কোর্টে যাবে বলেছে। ব্যক্তিগত ভাবে
আমিও যাব। বিনা দোষে এই শাস্তি আমি নেব না।’’
গঙ্গাধরপুর বালিকা বিদ্যামন্দিরের শিক্ষিকা দেবযানী দাসও ওই বছরের প্যানেলভুক্ত। তিনি নিয়োগপত্র পান ২০১৮ সালে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দোষীদের সাজা হোক। কিন্তু আমি তো
কোনও দোষ করিনি। আমাকে সিবিআই, ইডি কোনও দিন ডেকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। স্কুল শিক্ষা দফতর যে সব নথি জমা দিতে বলেছে, দিয়েছি। তা নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন তোলেনি। আচমকা আমাদের প্যানেল বাতিল করে দেওয়া হল!’’
হুগলির নালিকুল স্কুলের এক শিক্ষকও বলেন, ‘‘আমি টাকা দিয়ে চাকরি পাইনি। যোগ্যতায় পেয়েছিলাম। একেবারে পথে বসে যাব। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হব।’’
তৃণমূলের শিক্ষক-নেতা সিরাজুলও মনে করছেন, একটি প্যানেলের সবাই দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছে, এটা অবাস্তব। তিনি বলেন, ‘‘যে সব শিক্ষকের চাকরি নিয়ে
সঙ্কট দেখা দিয়েছে, আমরা তাঁদের পাশে আছি। দোষীদের শাস্তি দিক আদালত। কিন্তু অবিচারের শিকার হওয়া শিক্ষকদের জন্য আইনি পথে যত দূর যেতে হয় যাব।’’ এবিটিএ-র রাজ্য সদস্য মনিরুল ইসলাম,
‘‘যাঁরা অন্যায় বা দুর্নীতি করে
চাকরি পেয়েছেন, তাদের শাস্তি তো আমরা সব সময় চেয়েছি।
তবে নির্দোষদের শাস্তি কোনও ভাবেই কাম্য নয়।’’