রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছে পুরসভা
Most Dirty City

দেশের নোংরা শহরের মধ্যে হুগলি-চুঁচুড়াও

সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রের রিপোর্টে দেশের সবচেয়ে নোংরা শহরের তালিকায় ঠাঁই হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পুর-এলাকার। এর মধ্যে হুগলির একাধিক শহর রয়েছে। এই সব জনপদের পরিস্থিতি ঘুরে দেখল আনন্দবাজার। আজ, হুগলি-চুঁচুড়া।

Advertisement

সুদীপ দাস

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫১
Share:

২২টি ট্রাক্টর। পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য পৃথক ভাবে সংগ্রহের জন্য ৩০৪টি গাড়ি। রাস্তায় জল ছেটানোর জন্য দু’টি 'স্প্রিঙ্কলার', ঝাড়ু দেওয়ার জন্য একটি 'রোবট' ছাড়াও সাফাইয়ের জন্য রয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি কর্মী। এত সব 'ঢাল-তরোয়াল'! তা-ও গঙ্গা পাড়ের নোংরা শহরের তকমা মিলল হুগলি-চুঁচুড়ার।

Advertisement

দিনকয়েক আগে কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক ২০২৩-এর 'স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ'-এর রিপোর্ট পেশ করেছে। সেখানে, দেশের গঙ্গা তীরবর্তী ৮৮টি শহরের শেষ দশটির মধ্যে ন'টি-ই পশ্চিমবঙ্গের। যার মধ্যে রয়েছে হুগলির সদর শহর চুঁচুড়া। সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হতেই শোরগোল পড়েছে পুরসভার অন্দরে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে জেলা প্রশাসনও।

মহকুমাশাসক (সদর) স্মিতা শুক্ল বলেন, "কিসের ভিত্তিতে ওই রিপোর্ট তৈরি হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। তবে, বিগত কয়েক বছর ধরে শহর ও গ্রামাঞ্চলে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট জোর দেওয়া হয়েছে। বাড়ি-বাড়ি বর্জ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এরপরেও কোথাও খামতি থাকলে দেখা হবে।’’

Advertisement

শহর পরিষ্কার রাখার পুরো বিষয়টি পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে। ওই বিভাগের পুর-পারিষদ জয়দেব অধিকারীর দাবি, বাম আমলের তুলনায় শহরের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। রাস্তাঘাট পরিষ্কার হয়েছে। প্রয়োজনে রাতেও
সাফাইয়ের কাজ চলে। গঙ্গাপাড়ের সৌন্দর্যায়ন হয়েছে। পুরসভার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ নোংরার ছবি দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘দু’এক জায়গায় সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু সে জন্য রিপোর্টে এই শহরকে শেষের সারিতে রাখা বিজেপির রাজনৈতিক অভিসন্ধি।’’

জয়দেব ওই দাবি করলেও সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা কিন্তু সে কথা বলছে না। ৩০টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট হুগলি-চুঁচুড়া পুর এলাকায় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে পাশের কোদালিয়া ১ পঞ্চায়েতের সুকান্তনগরের ভাগাড়ে। তবে, তা পুরোপুরি চালু হয়নি। ভাগাড়ের চাপ কমাতে বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন ঘেরা এলাকায় মাঝে মধ্যে আবর্জনা ফেলে রাখা হয়। স্থানীয়েরা বেশ কয়েকবার তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন।

শহরবাসীর একাংশের ক্ষোভ, সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়, রাস্তার পাশে থাকা ভ্যাটগুলিকে নিয়ে। ঘড়ির মোড়ের কাছেই মহিলা থানার ঠিক উল্টো দিকের ভ্যাট উপচে ময়লা রাস্তায় পড়ে থাকার অভিযোগ নতুন নয়। খাদ্য ভবনের কাছে, হাসপাতালের অদূরে জেলা ভ্যাকসিন সেন্টারের সামনে, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে হরনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছের ভ্যাটগুলি থেকে আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে।

শহরের এক শিক্ষিকার অভিযোগ, মহিলা থানার সামনে দিয়ে যাওয়া যায় না। একই অবস্থা থাকে পুলিশ লাইনের মাঠের ধারেও। এ ছাড়াও ইমামবাড়ার কাছে জেলাশাসক ভবনের উত্তর গেট, চকবাজার মাছের আড়ত সংলগ্ন গঙ্গাপাড়, চাঁদনি ঘাট প্রভৃতি এলাকায় গেলেই আবর্জনার দেখা মেলে। আবর্জনার সিংহভাগই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ। বছর দুয়েক আগে প্লাস্টিক বর্জনে কোমর বেঁধে নেমেছিল পুরসভা। কিন্তু কয়েকমাস পর পুর-কর্তৃপক্ষ ঢিলে দেওয়ায় আবার পরিস্থিতি যে-কে সেই বলে দাবি, পরিবেশ সচেতন নাগরিকদের।

শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলার প্রাক্তন সভাপতি সুবীর নাগ ওই রিপোর্ট তৈরিতে রজনৈতিক অভিসন্ধির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, "রাজ্যের রিপোর্টের ভিত্তিতেই বিচার হয়েছে।" তাঁর খোঁচা, "শহরের আনাচে-কানাচে তাকালেই আবর্জনা চোখে পড়বে। নিকাশিগুলি পরিষ্কার হয় না। আগে সাফসুতরো করুক। তারপর
কেন্দ্রকে দোষ দিক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement