ডানলপ কারখানার সম্পত্তি বিক্রির খবর শুনে হাজির শ্রমিকেরা। ছবি: তাপস ঘোষ।
‘খদ্দের’ এলেন। বন্ধ সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানার অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রির প্রক্রিয়া চলল বৃহস্পতিবার। এ নিয়ে দিনভর আলোচনা হল শ্রমিক মহল্লায়। অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের অনেকের বক্তব্য, হাইকোর্টের মধ্যস্থতায় সম্পত্তি বিক্রির তোড়জোড় চলায় এ বার বকেয়া পাওনাগণ্ডা মিলবে বলে তাঁদের আশা। কেউ আবার বলছেন, ‘না আঁচালে
বিশ্বাস নেই’!
কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত লিক্যুইডেটরের তরফে সম্প্রতি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, ডানলপ কারখানার যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করা হবে। ই-নিলামের জন্য সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে প্রস্তাব চাওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতি এবং শুক্রবার ওই জায়গা তাঁদের পরিদর্শনের দিন ধার্য করা হয়। সেইমতো এ দিন নির্ধারিত সময়ের আগেই কারখানার পূর্ব গেটে লোকজন জড়ো হন।
কারখানার দরজার ভিতরে যখন নিলামের প্রাথমিক প্রক্রিয়া চলছে, হালচাল দেখতে বাইরে জড়ো হন বেশ কয়েক জন প্রাক্তন শ্রমিক। নিজেদের ভাগ্য নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে দিলীপ দত্ত অবসর নিয়েছেন ২০১৮ সালে। কারখানা বন্ধ হওয়ায় তার অনেক আগেই অবশ্য তিনি কর্মহীনের দলে। প্রায় ৪ কোটি টাকা বকেয়া। পেট চলে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চানাচুর-বিস্কুট, চা-পাতা বিক্রি করে। তিনি বা রমেশচন্দ্র দাসেরা বলছিলেন, ‘‘কী ভাবে আমাদের চলে, আমরাই জানি। যদি ঠাকুর ঠাকুর করে বকেয়াটা পেয়ে যাই!’’
সহদেব দাস, মহম্মদ আলি, লক্ষ্মীনারায়ণ শেঠ, পরেশ দাস— এঁদের কেউ স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন, কাউকে নির্দিষ্ট সময়ের আগে বসতে হয়েছে। হা-পিত্যেশ করে থেকেছেন বকেয়ার আশায়। পাননি। তাঁদের আশা, হাইকোর্ট কারখানার সম্পত্তি বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করায় বকেয়া মিটতেও পারে। সহদেবের কথায়, ‘‘আমাদের এখন আশায় বাঁচে
চাষা অবস্থা।’’
সবাই অবশ্য আশাবাদীর দলে নন। এমনই এক প্রাক্তন শ্রমিকের কথায়, ‘‘স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে থাকি। নিরাপত্তরক্ষী বা অন্য ছোট কাজ করে ছেলেকে পড়িয়েছি। ছেলে সফটওয়্যার সংস্থায় চাকরি পেয়েছে বলে রক্ষে। বকেয়ার যতক্ষণ না পাচ্ছি, বিশ্বাস নেই।’’ শ্রীকৃষ্ণ পাল নামে এক প্রাক্তন শ্রমিকের বক্তব্য, ‘‘ক্রেতা হিসেবে কিছু স্থানীয় লোককে দেখা গিয়েছে, যাঁদের এই সম্পত্তি কেনার মতো পুঁজি আছে কিনা, সন্দেহ।’’
কারখানা চত্বরের অপর প্রান্তে বিশাল মাঠে আগামী সোমবার জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার একই মাঠে জনসভা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এ দিন কারখানার সম্পত্তি বিক্রির প্রক্রিয়া চলার সময় মাঠে প্রধানমন্ত্রীর সভামঞ্চ বাঁধার কাজ হচ্ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর সভার খুঁটিনাটি দেখতে আসেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব এবং যুবনেতা তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল নেতাদের দেখে ক্ষোভের কথা জানালেন জয়প্রকাশ সিংহ নামে অবসরপ্রাপ্ত এক শ্রমিক। তাঁরও কয়েক লক্ষ টাকা বকেয়া। বিস্কুট কারখানায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে সংসার চলছিল। লকডাউনে কাজ গিয়েছে। বয়সের কারণে নতুন কাজ মিলছে না। আদতে বিহারের বাসিন্দা জয়প্রকাশের কথায়, ‘‘সংসার চালাতে ওখানে জমি বেচতে হয়েছে। প্রাপ্য টাকাটা মিটিয়ে দিলে ওখানে চলে যাব।’’ তিনি বলেন, ‘‘দিদি বলেছিলেন, কারখানা খুলবেন। ভরসা করেছিলাম। খুলল না। মোদী বা দিদি—কেউ কিছু অন্তত করুন। শ্রমিকের প্রাপ্য মেটানো হোক। তার পরে কারখানা খোলা বা অন্য কারখানা করা হোক। আর পারা যাচ্ছে না।’’
অনেকেই জানান, সভা নিয়ে আগ্রহ নেই। তাঁরা শুধু জানতে চান, ডানলপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর কী ভাবনা।