বাড়ির সামনে বসে রয়েছেন স্মৃতিকণাদেবী। ডোমজুড়ের লক্ষ্মণপুরে। নিজস্ব চিত্র।
ছোট থেকেই দাদু তাঁর প্রিয় মানুষ। তাই অসুস্থ দাদুকে দেখতে প্রায়ই ডোমজুড়ের লক্ষ্মণপুরে মাসির বাড়িতে আসতেন অর্পিতা। কয়েক ঘণ্টা থেকে দাদু আর মাসি-মেসোর সঙ্গে গল্প করে ফিরে যেতেন। তাঁর হাসিখুশি সেই বোনঝিই শিক্ষা-দুর্নীতিতে জড়িত অভিযোগে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছে, এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না মাসি স্মৃতিকণা মুখোপাধ্যায়।
হাওড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম ডোমজুড়ের লক্ষণপুর। ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অপির্তা মুখোপাধ্যায়ের মাসি বছর সত্তরের স্মৃতিকণাদেবী জানান, তাঁর বাবা দুর্গাপদ চক্রবর্তী বয়সের ভারে নুব্জ। বাবাকে তিনিই বাড়িতে এনে রেখেছেন। দাদুকে দেখতে বছরেদু’ তিন বার আসতেন অপির্তা। সঙ্গে কিছু মিষ্টি, ফল। কোনও বাহুল্য ছিল না। এক মাস আগেই ছোট বোনকে নিয়ে এখান থেকে অর্পিতা ঘুরে গিয়েছেন।
স্মৃতিকণাদেবীর কথায়, ‘‘ও অভিনয় করত। আমরা জানতাম, সেই সূত্রেই যা রোজগার। পার্থবাবুর সঙ্গে পরিচয়ের বিষয়টা জানতাম। কিন্তু অর্পিতা তা নিয়ে আমাদের কাছে কখনও বাড়াবাড়ি কিছু বলেনি।’’ স্মৃতিকণাদেবীর স্বামী মোহন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছোট থেকে মেয়েটাকে চিনি। কাজের জগতে গিয়ে একটু বদলে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু ওর বাড়িতে এত টাকা! আমরাও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।’’
তবে অর্পিতার ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠতা’র কথা জানতেন স্মৃতিকণাদেবীর পড়শিরা। তাঁদের দাবি, অর্পিতা প্রায়ই অনেককে পার্থবাবুর মাধ্যমে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এক পড়শি যুবকের দাবি, ‘‘আমি মাস্টার্স করে বসে আছি। অর্পিতাদি বলেছিল, পার্থবাবুকে বলে একটা চাকরি করে দেবে। টাকা-পয়সা কখনও চায়নি।’’ অন্য এক পড়শির কথায়, ‘‘ও তো ছোট থেকেই এখানে আসত। অভিনয় করার পর থেকে সাজগোজে বদল এসেছিল। আগে সকলের সঙ্গে অনেক সহজ ভাবে মিশত। গত কয়েক বছরে ব্যবহার বদলে গিয়েছিল।’’
স্মৃতিকণাদেবীর ছেলে মুকুল তিন বছর আগে একটি চাকরি পেয়েছেন। আর অর্পিতার গ্রেফতারির পর থেকে মুকুলও বাড়ি ফেরেননি। মুকুল নবান্নে চাকরি করেন বলেই এলাকায় প্রচার ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অর্পিতার তদবিরে মুকুলের চাকরি করে দিয়েছিলেন পার্থবাবুই। সে কারণেই পার্থবাবুর গ্রেফতারির পর থেকে মুকুল পলাতক।
বিষয়টি মানতে নারাজ স্মৃতিকাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলে কী চাকরি করে জানি না। তবে কাজের সূত্রে ও কয়েক দিন বাড়িতে নেই। আমার ছেলে নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছে। অপির্তা আমাদের কখনও টাকা দিয়ে সাহায্য করেনি। ছেলের চাকরিও করে দেয়নি।’’