ট্রেনের ধাক্কায় জখম কুকুরের চিকিৎসা। নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবার তখন সকাল সাড়ে ৬টা হবে। নৈহাটিগামী ব্যান্ডেল লোকাল হুগলি ঘাট স্টেশন ছেড়েছে। রেল যাত্রীদের মধ্যে শুরু হয় হৈ চৈ, কেউ কাটা পড়েছে! প্যাসেঞ্জার তোলার জন্য কিছু টোটো চালক ছুটে গিয়ে দেখেন লাইনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে একটি পথকুকুর।
তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় কারবালা মোড়ের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার তথা এলাকার কাউন্সিলর ইন্দ্রজিৎ দত্তকে। তিনি এসে দেখেন, কুকুরটির চোখ বেয়ে নামছে জল। ইন্দ্রজিৎ ফোন করেন পশু চিকিৎসক কুণাল চক্রবর্তীকে। পশু নিয়ে কাজ করা কুণাল অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে নিজের সংস্থায় নিয়ে যান জখম সারমেয়টিকে। স্যালাইন-অক্সিজেন লাগিয়ে শুরু হয় প্রাথমিক চিকিৎসা। ক্ষতস্থান মেরামত করা হয়। বিকেলে কুণাল জানান, আপাতত সে কিছুটা স্থিতিশীল। কুকুরটিকে একটি ‘শেল্টারে’ পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, শনিবার পরিস্থিতি বুঝে অস্ত্রোপচার করা হবে। এরপরে নকল পায়ের বিষয়টিও দেখা হবে।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে ব্যান্ডেলে একটি পথকুকুরের গাড়ি চাপা পড়ার ঘটনা থানা পর্যন্ত গড়ায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কুকুরটিকে চাপা দেওয়া কতটা অনিচ্ছাকৃত, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু পরে সব ধামাচাপা পড়ে যায়। পথেঘাটে বহু কুকুরকে লোকজন নির্যাতন করছে, এ দৃশ্য বিরল নয় বলে জানান পেয়ারাবাগানের যুবক কার্তিক দাস।
ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘‘আমার সংস্থা মূলত মানুষের সমস্যা নিয়েই কাজ করে। কিন্তু এ দিন কুকুরটির চোখে জল দেখে সত্যিই খারাপ লেগেছে। আগামী দিনে এই পশুদের জন্যও কিছু করার চেষ্টা করব।’’
স্থানীয় টোটো চালকেরা, যাঁরা কুকুরটি ত্রাতা, তাঁরা বলছেন, ‘‘মানুষ না হোক, কুকুরও তো রক্তমাংসের জীব। তাই ওকে বাঁচাতে পেরে আমরা খুশি। সুস্থ হয়ে ওঠুক, এটাই আমাদের চাওয়া।’’