বন্ধ ক্লাস রুম জুড়ে এখন শুধুই জুতোর স্তূপ। — নিজস্ব চিত্র।
পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে স্কুলে তালা পড়েছে বহুদিন আগেই। বন্ধ ক্লাস রুম জুড়ে এখন শুধুই জুতোর স্তূপ। সম্প্রতি এমনই ছবি দেখা গিয়েছে হাওড়ার ডোমজুড় বিধানসভা এলাকার পায়রাটুঙ্গি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবক-সহ স্থানীয় মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সরকারি উদ্যোগে বিনা পয়সায় জুতো দেওয়ার কথা ছিল এলাকার গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের। কিন্তু সেই উদ্যোগ আদতে বাস্তবায়িত হয়নি। অভিযোগ, সেই জুতোগুলি এখন অবহেলায় পড়ে নষ্ট হচ্ছে। পোকায় কাটছে কয়েকশো জুতো। জানা গিয়েছে, স্কুলটি বন্ধের পর থেকেই সরব হয়েছিলেন অভিভাবকেরা। বর্তমানে স্কুলটি জুতোর গুদামে পরিণত হওয়ায় উদ্বিগ্ন তাঁরা। স্কুল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
এ প্রসঙ্গে স্কুলের একমাত্র শিক্ষিকা কমলা ঘোষ বলেন, “২০১৮ সালের পর থেকে একে একে শিক্ষকেরা অবসর নিয়েছেন। এর পর স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু হয়। এর ফলে আমি সম্পূর্ণ একা হয়ে যাই। আমার পক্ষে ৮০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে স্কুল চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই আমি সরে দাঁড়িয়েছি। ফলত পঠন-পাঠন বন্ধ হয়ে যায় স্কুলটিতে।” তিনি আরও বলেন, “কয়েক বছর আগে বিভিন্ন প্রাইমারি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের জুতো দেওয়ার জন্য সেগুলি এখানে মজুত করা হয়েছিল। কিছু স্কুলে জুতো বিতরণ করা হয়। কিন্তু তার পর থেকে সেই জুতোগুলি এখানে পড়েই রয়েছে।”
মাকড়দহ দু’নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তনুশ্রী কর্মকার বলেন, “এ ভাবে এত জুতো নষ্ট হওয়াটা ঠিক নয়।” স্থানীয় বাসিন্দা রশিদ আহমেদ জানান, এই মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রটি তৈরির পিছনে গ্রামবাসীদের অনেক অবদান রয়েছে। এটি পুনরুজ্জীবিত হোক সবাই চাইছেন।
অন্যদিকে, জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, “গুদামে যে জুতো আছে সে ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে শোকজ় করা হয়েছে।” ওই সমস্ত জুতোগুলি অন্য স্কুলে বিলি করারও আশ্বাস দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বাম আমলে ‘সকলের জন্য শিক্ষা’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে গ্রামে গ্রামে এসএসকে (প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র) ও এমএসকে (মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র- পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত) তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পঞ্চায়েত দপ্তর। জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, হাওড়া জেলায় এক সময় ৩০৭টি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র থাকলেও বর্তমানে তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪১টি। এ ছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে ২৭টি। এখন স্কুলগুলির বেশিরভাগই শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। যেহেতু এই স্কুলগুলি সরাসরি জেলা শিক্ষা দপ্তরের অধীনে নয়, তাই এখানে অন্য স্কুলগুলি থেকেও শিক্ষকদের এখানে বদলি করে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আবার পঞ্চায়েত দপ্তর থেকেও নতুন শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে না। ফলে এই অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।